ভোলায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মাছ-মাংস-আলু-ডিম- পেঁয়াজ, সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বাজার মনিটরিং জোরদারের আহবান সাধারন ভোক্তাদের
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি ;
ভোলার বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে সবজি, মাছ, মাংস, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাউল, ডাল, চিনি, লবনসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমানে পণ্য থাকলেও দাম কিছুতেই কমছেনা। প্রতিটি পণ্য ব্যবসায়ীদের সমিতি আর সিন্ডিকেটের রোটেশনের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতিদিন দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানছেনা। মাঝে মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তারা বাজার পরিদর্শনে আসলেও মূল্য তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়না। ভোলা সদরের অর্ধশত বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখনো কোনো পণ্যের দাম কমেনি। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে আরও বেড়েছে। এর পিছনে কারণ রয়েছে আড়তদারদের রুটেশন ও সিন্ডিকেট।
যার ফলে সব কিছুই রয়েছে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। প্রতিদিন বাজার তদারকী না থাকায় চাহিদা মত কিছুই কিনতে পারছেননা ভোক্তারা। রোটেশন করে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ভোলার বাজারে শতাধীক কাচা বাজারের আড়তদার রোটেশন করে প্রতিদিন ৪জন করে আড়তদার প্রতিদিন-সবজি, মাছ, মাংস, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চিনি, লবনসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে আমদানি করে তাদের ইচ্ছে মত দামে বিক্রি করে। তাই ভোক্তারা তাদের সংসারের চাহিদামত পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। রোটেশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতারা বেশী দামে পণ্য কিনে নিয়ে বেশী দামে বিক্রি করছেন। সিন্ডিকেট আড়তদারদের মধ্যে রয়েছেন, আবুল হোসেন, শাহে আলম, এমরান, শাজাহান, কামরুল, সিরাজ, মাহে আলম, মোস্তফা, মনির, সুলতান আহম্মদ, ওহাব মিয়া, মিলন সাজি, মনির (২), সিরাজ (মহলদার)। ডিম ব্যবসায়ী রয়েছেন ১০জনের অধিক। তাদের হাতে জিম্মি রয়েছেন ভোলাবাসী।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি। অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে। অন্যদিকে, প্রতি কেজি চাষের মাছের দাম এখন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। আর দেশী মাছগুলোর দাম যেন আকাশ ছোঁয়া, বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় কেজি প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তিতে। ডিমের বাজারে বেশ কয়েক মাস হলো চলছে অস্থিরতা। এখন প্রতি হালি ডিমের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। ফলে পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজারদরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ভোক্তা ওমর ফারুক বলেন, দামের চোটে আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। আগে মাছ-মাংস না খেতে পারলে শাক-সবজি খেয়ে থাকতাম। এখন সেটাও সামর্থের বাইরে চলে গেছে। এভাবে চললে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, রোটেশন ব্যবসায়ীদের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে আলু ৬০, গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, রেখা-১০০-১২০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। কম দামের মধ্যে মূলার কেজি ৮০-১০০ টাকা, আর পেঁপে ৪০-৫০ টাকা।
বয়লার মুরগী ২২০ থেকে ২৫০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকার নিচে কোন লাউ পাওয়া যায়না। লাল মাকের কেজি-৫০০ টাকা, পাতা কপি-২০০ টাকা, ধনেপাতা কেজি-৪০০টাকা। কম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙ্গাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ, তাও ২৫০ টাকার নিচে দাম নাই। এছাড়া ছোট রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ক্রেতা রমেশ বলেন, এমনিতেই আয় নেই অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে। বাড়তি দামের ফলে নূন্যতম শাক-সবজি কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মাছের বাজারে তো ৫০০ টাকার নিচে মাছ পাওয়াই স্বপ্নের ব্যাপার। শতাধীক আড়তে চাউল-প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬, আটা-১০, ডাল-৫, সাবান-১০, তেল-১৮ বেড়েছে। সবার আয় তো সমান নয়। এভাবে চলতে থাকলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পরবে।নিত্যপন্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানান, মূল মোকামে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা চালায়। আমরা বেশী দামে ক্রয় করে এনে বেশী দামে বিক্রি করি। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। তারা সবাই অফিসের কাজে বাহিরে রয়েছেন বলে অফিস সুত্রে জানা গেছে।