জামালপুর সদর আসনের প্রতি কেন্দ্রে সেনা মোতায়েন চান স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু, ওসির প্রত্যাহার দাবি
মো: শামীম হোসেন(জামালপুর) প্রতিনিধি :
জামালপুর-৫ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করেছেন এছাড়া।
পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য সদর থানার ওসির প্রত্যাহার ও নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করতে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনামোতায়েনের দাবি জানান তিনি। শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের তমালতলাস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেজাউল করিম রেজনু জানান,আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম।
আজাদের সমর্থকরা শুরু থেকেই নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছেন। রেজাউল করিম রেজনুর ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙচুর, কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধামকিসহ তার লোকজনদের মাঠছাড়া করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে গত ২৭ ডিসেম্বর উপজেলার ১১নং শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও রাজনৈতিক ফায়দা নিতে জেলা আওয়ায়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আছাদুজ্জামান আকন্দ বাবুসহ ২৫ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
অথচ মামলায় উল্লেখিত সময়ে আছাদুজ্জামান আকন্দ বাবু নান্দিনায় ব্যবসায়ী মালেক ডিলারের জানাজায় ছিলেন। যেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাব, ঈগল প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
রেজাউল করিম রেজনু অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে তাঁর নির্বাচনী আসন রেখে সদরের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে ভোট প্রার্থনাসহ প্রভাব বিস্তার করে আসছেন।
২৩ ডিসেম্বর থেকে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করাসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল।
নৌকায় ভোট না দিলে বিভিন্ন ইউনিয়নের দলীয় নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে সরকারি বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের ভাতা বন্ধের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ১২নং মেষ্টা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক বাবু তার এলাকার সরকারি ভাতাভোগীদের এমন হুমকির ঘটনা চাউর হয়েছে।
এছাড়া এমন ঘটনায় ইতোমধ্যেই ৩নং লক্ষীরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাতেম আলী তারাকে শোকজ করা হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক আমলারা নীতিমালা লঙ্ঘন করে নৌকার পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
রেজনু জানান, জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান সম্প্রতি সার্কিট হাউসে অবস্থান করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। সাবেক ও বর্তমান কতিপয় আমলা সাধারণ ভোটারদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
বর্তমান জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল আলম গত ২১ ডিসেম্বর তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার নান্দিনা পূর্ব বাজারের বাসায় ২-৩দিন অবস্থান করে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচন প্রভাবিত করতে কালো টাকার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগে বলা হয়,
নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ মূখ্য সচিব এবং বিদ্যুৎ সচিব থাকাকালীন নানা উপায়ে অনৈতিক অর্থের মালিক হন এবং সেসব কালো টাকা নির্বাচন প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের কথা বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। অভিযোগ করা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে শহরের কম্পপুর এলাকায় এক জনসভায় জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতিতে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর বংশ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। মেয়র তার
সরকারি গাড়ি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রে নৌকার লোকজনের পরিকল্পিত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নেতাকর্মীদের মারধরসহ নানাভাবে ভয়ভীতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টসহ আচরণবিধি ভঙ্গের মহোৎসব চললেও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নীরব বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজনু। তিনি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীরের পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য তার প্রত্যাহার এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঈগল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আছাদুজ্জামান আকন্দ বাবু। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট ও কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার আচরণে আমি দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় লিখিতভাবে অব্যাহতি চাই, কিন্তু তা মঞ্জুর না করে
উল্টো আমাকে চিঠি দিয়ে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়েছে। নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে বলে বক্তারা জানান। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনুর ঈগল প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত বলেও তারা দাবি করেন।