সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশুর চিকিৎসক সংকট চলছে। জেলায় ১৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন। সাতটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেই। প্রাণিসম্পদের দিক দিয়ে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা ভোলা।
চিকিৎসক না থাকার কারণে খামারিদের হাতুড়ে চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা ও সেবা পেলে প্রাণিসম্পদের আরও উন্নতি ঘটবে। এ সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, ভোলায় যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁরা তদবির করে অন্যত্র চলে যান। বরিশাল বিভাগে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) পাস করা শিক্ষার্থী ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সংখ্যা কম।
একজন কর্মকর্তা নিজের জেলায় চাকরি করতে না পারলেও নিজ বিভাগে চাকরি করতে চান। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ডিভিএম বিষয়ে ডিগ্রি না নিলে, কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলে এই সংকট থাকবে। এ ছাড়া ভোলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলেও সমস্যার সমাধান হবে না। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভোলায় গরু রয়েছে প্রায় ছয় লাখ। এ ছাড়া ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ, ২ লাখ ৬৯ হাজার ছাগল ও ২১ হাজার ভেড়া রয়েছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলায় দুজন ভেটেরিনারি সার্জন আছেন। ৭৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদে আছেন ৪৪ জন। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে কর্মকর্তার পদ চারটি। আছেন শুধু জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও)। এখানে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষকের পদ শূন্য।
কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতুড়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে পশু ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা করেন। ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানে ক্যাম্প বসিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা ও টিকা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, মদনপুরের খামারিরা কখনো সরকারি চিকিৎসকের সেবা পাননি।
সপ্তাহে যদি এক দিনও মদনপুরে চিকিৎসা ও টিকা ক্যাম্প বসত, তাহলে এ চরের খামারিরা উপকৃত হতেন। মহিষের খামারি আবদুল হাই বলেন, মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা চর মদনপুর ও চর নেয়ামতপুরের পূর্বের চরে তাঁদের দুই শতাধিক মহিষ রয়েছে। সেখানে কোনো সরকারি চিকিৎসক গবাদিপশুর চিকিৎসা দেন না। রোগবালাই হলে মহিষকে মেঘনা নদী সাঁতরে পশু হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে স্থানীয়
পশুচিকিৎসককে দেখাতে হয়। অনেক পশু সুস্থ হয়ে ওঠে। অনেক সময় মারা যায়। সবই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হয়। সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের আকতার ডেইরি ফার্মের গরু রয়েছে ৪৫০টি। আরও শতাধিক মহিষ-ভেড়া আছে। প্রতিদিন খামারে ৪৫০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। খামারের পরিচালক আক্তার হোসেন বলেন,
কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল কেবল ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের খামারে চিকিৎসা করেন। জেলায় এই খাতে যত বরাদ্দ আসে, তা নেতাদের খামারে যায় ও বাকিটা লোপাট করা হয়। তাঁর (ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল) কথা না শুনলে তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ জন্য তাঁরা বদলি হতে বাধ্য হন। এসব অভিযোগ
অস্বীকার করে ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, একজন ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার (ইউএলও) অধীনে চাকরি করেন। তিনি আগে কৈফিয়ত দেন ইউএলওর কাছে। তাঁদের অ্যাসোসিয়েশন আছে, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় আছে। খারাপ ব্যবহার করেন, এমন অভিযোগ উঠলেই, তা সত্য হয়ে যায় না।