প্রত্যাহার হচ্ছে সাবেক সরকারে তৈলবাজ দলবাজ সচিবরা
আলী আহসান,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট:
০৩ অক্টোবর ২০২৪,
প্রশাসনে সচিব পদে আরও পরিবর্তন আসছে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বড় বড় ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে রয়েছেন তাদের প্রত্যাহার ও নতুন সচিব নিয়োগ দিয়ে পদায়ন করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কাঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের চুক্তি বাতিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাযালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে ওএসডি এবং বরখাস্ত আবার সাবেক জননিরাপ্তা বিভাগের সচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সচিব মো.নূরুল আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.কামরুল হাসানসহ আওয়ামীলীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিবদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ সচিবদের প্রথমে ওএসডি পরে মামলা করা এবং গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা হতে পারে বলে জনপ্রশাস মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদুল হাসান। সচিব পদে পদোন্নতির পর তাকে এই নিয়োগ দিয়ে গতকাল বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।মাসুদুল হাসান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের দায়িত্বে আছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে গত সোমবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
ওইদিনই দুই বছরের চুক্তিতে খাদ্য সচিব নিয়োগ পান অবসরে যাওয়া বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খান। তবে তার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা রয়েছে, এটা জানার পরদিনই গত মঙ্গলবার তার এ নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিতকির্ত দুই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কাঠোর নিদেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেধাবী, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সচিব পদসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশসহ প্রস্তাব পাঠাঠে বলা হয়েছে।
তবে কোনো দুর্নীতিবাজ- দুদকের মামলার অভিযুক্তদের নাম বাতিল করতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীত যাচাই করে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়োগের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে ভুল বার্তা যাবে। এছাড়া চলতি মাসে বিদ্যুৎ সচিবসহ বেশ কয়েকজন সচিব স্বাভাবিক ভাবে অবসরে যাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল দেশে ফিরলে কয়েকজন সচিব প্রত্যাহার ও নতুন পদায়ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। তিনি জানান, নতুন ডিসিদের কেউ সক্ষমতা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যাহার হতে পারেন। শূন্য থাকা ৮ জেলার ডিসি নিয়োগও হবে দ্রুত। রদবদল হতে পারে এডিসি ও ইউএনও পদেও। সচিব মোখলেস উর রহমান জানান, প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে কঠোর সরকার। গতকাল থেকে শুরু হচ্ছে প্রশাসন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমও।
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রশাসন সাজিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। সেই প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তবর্তী সরকার। এরইমধ্যে কয়েকজন সচিবকে ওসডি বা অবসরে পাঠানো হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১১ সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় এখন সচিব শূন্য। আবার বেশকিছু মন্ত্রণালয়ে থেকে গেছেন বিগত সময়ের সুবিধাভোগীরা। জনপ্রশাসন সচিব জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে, সচিব ও অধিদফতরের প্রধান পদে নতুন পদায়ন হবে। প্রত্যাহার হবেন কয়েকজন।
মাঠ প্রশাসনের চালক জেলা প্রশাসক বা ডিসিরা। ক্ষমতার পালাবদলে ৫১ জেলায় যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন নতুনরা। অভিযোগ থাকায় নিয়োগের পরদিনই বাতিল হয় ৮ জেলার নতুন ডিসির নিয়োগ। তাই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে এসব জেলা। আবার উপসচিব পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ক্ষোভ ও অভিযোগ আছে নতুন ডিসি নিয়োগ নিয়ে। তকে মাঠ প্রশাসনে ৫১ জেলায় যোগ দেয়া জেলা প্রশাসকরা ভালো দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
এ ব্যপারে সাবেক সচিব একে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সিদ্ধান্ত নিলে বুঝে শুনে নেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নিলে আর পরিবর্তন না করা ভালো। পরিবর্তন করলে একটা খারাপ বার্তা যায়। সরকার গোছানোর চেষ্টা করছে। আমি মনে করি আগামী এক মাসের মধ্যে এসব কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার হবে।
এদিকে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামানকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতি ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নির্দেশনা দেয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
আবু হেনা মোস্তফা জামান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, নির্মাণ কাজ, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
দুর্নীতিবাজদের পদোন্নতি না দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কঠোর নির্দেশনা।