নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সাগরকণ্যা কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনদিন ব্যাপী গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসব।
শনিবার ভোর ৩ টা ৪৫ মিনিটে গঙ্গাস্নানের মাধ্যমে শেষ হয়েছে শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলা।
জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সমুদ্রের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সমুদ্রের জলে মোমবাতি, আগরবাতি, বেলপাতা, ফুল, দুর্বা, হরতকি, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর অর্পণ করেন হিন্দু ধর্মালম্বী নারীরা। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। পরে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ১৭ জোড়া যুগল প্রীতিমা দর্শন করেন ভক্তরা।
এবারের রাস উৎসব অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু আলাদা। প্রতি বছর লগ্ন লাগার একদিনের মাথায় শেষ হয় গঙ্গাস্নান। এ বছর দুইদিন ব্যাপী পুণ্য স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে লগ্ন শুরু হয় শেষ হয় শনিবার ভোরে। স্নান শেষে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন পুণ্যার্থীরা।
তিনদিন ব্যাপী রাস উৎসবে লক্ষাধিক শ্রী কৃষ্ণ ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন।
মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতেছিল পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা। স্থানীয় ও ঢাকার শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য, বাউল ও ফোকগানে মেতে ওঠে হাজার হাজার দর্শক শ্রোতা।
রাস মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চার শতাধিক দোকান বসে বাহারি রকমের খেলনা সহ নানা রকম সামগ্রী নিয়ে। তিন দিনের এই মেলায় কোটি টাকার উপরে বেচাকেনা হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুয়াকাটায় রাস উৎসব শেষ হলেও আজ কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমে রাস উৎসব শুরু হয়েছে। এ উৎসব চলবে ৫ দিন পর্যন্ত।
কুয়াকাটায় রাস মেলায় আগতদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ,থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, ভিডিপির সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ নজরদারি করেন। কোন ধরনের অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও সরব ছিলেন।
জানা গেছে, মানবতা রক্ষায় দ্বাপর যুগে কংস রাজাকে বস করে পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে রাধা-কৃষ্ণের পরম প্রেম। সেই থেকেই মূলত রাস উৎসবের প্রচলন হয়। তবে সত্য ও সুন্দরের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব উদযাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
খুলনা থেকে আসা পূন্যার্থী সজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্নানে এসেছি। জাগতিক অনেক পাপ হয়ে থাকে আমাদের, তাই পবিত্র হওয়ার জন্য গঙ্গায় আসছি। তবে এবছর এখানে আসলেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দুবলার চরে রাস উদযাপন করেছি।
বরিশাল থেকে আসা পূন্যার্থী সম্রাট কর্মকার বলেন, রাতভর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেছি। এ অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে পূন্যস্নান করেছি। তাই প্রতি বছরের ন্যায় বছরও কুয়াকাটায় আসা। আসা করছি পূন্যস্নানের মাধ্যমে সকল জাগতিক পাপ দূর হয়ে গেছে।
রাস উৎসবে অংশ গ্রহন করা সৌমির বলেন, সারা বছর অপেক্ষা করি এ দিনটির জন্য। আমি ৫ বছর ধরে স্নানে আসি এবং আমি আমার মানত করা পূজা দেই গঙ্গায়। যাতে গঙ্গা মা আমাকে মঙ্গল করে।
রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে এবারের আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে ব্যাপক ভীড় ছিল। খাবার হোটেল গুলোতেও বেচাকেনার ধুম পরে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস মেলায় আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি,পুলিশ,র্যাব,গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছিল পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোষ্ট এর মাধ্যমে পূন্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবেই শেষ করতে সক্ষম হল এবারের আয়োজনটি।
কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাত ৫ টা ৪৩ মিনিটে পূর্ণিমার লগ্ন শুরু হওয়ার পর পরই বেশির ভাগ পূণ্যার্থীরা স্নান সেরে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে। আবার অনেকে পূর্ণিমার লগ্ন শেষ হওয়া পর্যন্ত স্নান শেরে শনিবার ভোরে কুয়াকাটা ত্যাগ করেছেন।
রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরন দাস জানিয়েছেন, পূর্ণিমার লগ্ন লাগা থেকেই কুয়াকাটায় আগত ভক্তরা উলু ধ্বনি দিতে দিতে সমুদ্রে গঙ্গাস্নান শেষ করেছেন। তিনি আরো জানান, এবারে সমুদ্রে গঙ্গাস্নান শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে এবং শনিবার ভোরে তা শেষ হয়েছে। এবারে একত্রে ভক্তরা স্নান করেনি।
পরে সমুদ্রে স্নান শেরে শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চের যূগল দর্শন শেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করেন।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, এবারের রাস উৎসব শৃঙ্খলার সাথে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে রাস উদযাপন করেছে। তিনদিন ব্যাপী রাস পুর্নিমা উৎসবে প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। রাস মেলায় প্রায় চার শতাধিক দোকানপাট বসেছে। মেলার দোকানপাট থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে পৌর প্রশাসন।
তিনি আরো জানান, মেলায় কোটি টাকার উপর বিকিকিনি হয়েছে।