অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায় বিচার নিশ্চত করতে বদ্ধপরিকর-উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ
বিলাল হুসাইন,চিফ রিপোর্টার:ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ :
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায় বিচার নিশ্চত করতে বদ্ধপরিকর। আমরা চাই অপরাধী ধরা পড়ুক এবং অপরাধের শাস্তি হোক।
সুশাসন মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্যতম অংশীদার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিএনএ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নারীর ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এবারও বাংলাদেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ডিএনএ দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে নারীর অধিকার, ন্যায়বিচার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিএনএ দিবস ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার: নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত”। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যা অত্যন্ত সময়পোযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আজ ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন ডি এন এ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব ডিএনএ দিবস ২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ডিএনএ দিবস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(সিনিয়র সচিবের রুটিন দায়িত্বে) জাকিয়া খানমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কমিশন প্রধান শিরীন পারভীন হক। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএনএ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর এ এইচ এম নুরুন্নবী, ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মমতাজ আরা বক্তৃতা করেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, অপরাধবিজ্ঞান ও অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থায়১৯৮৬ সাল থেকে ডিএনএ প্রযুক্তি বা ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং একটি যুগান্তকারী সংযোজন,যা বিচার ব্যবস্থাকে একটি নতুন যুগে উত্তরণ ঘটিয়েছে । মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’ নামক শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ২০০৬ সালে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা হ্রাস করা এবং সেবা কার্যক্রম জোরদারকরণে ‘ ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিঙক ল্যাবরেটরি( এনএফডিপিএল)’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে দেশব্যাপী এই সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে দেশের ৮ টি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্যানিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিএনএ ল্যাবসমূহ নারীর প্রতি সহিংসতা বিশেষ করে ধর্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিচারিক মামলার অভিযুক্তকে সনাক্তকরণ করে বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলে নারীও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারককার্য দ্রুত সম্পাদনের মাধ্যমে মামলার ব্যয় ও সময় অনেকাংশে লাঘব করা যাচ্ছে। যে সমস্ত মামলা উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণাদির অভাবে নিষ্পত্তি করা যেত না সেই সমস্ত মামলা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর হচ্ছে এবং নারীর অধিকার রক্ষায় ডিএনএ পরীক্ষা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়াও পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নির্ণয়ে অথবা মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বর্তমান বিশ্বে শিশু ও নারী পাচার রোধ এবং অবৈধ অভিবাসী প্রতিরোধের জন্যও ডিএনএ পরীক্ষা কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন , ২০০৯ সালে পিলখানা ট্রেজেডিতে নিহত ৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ২০১৩ সালে তাজরীন ফ্যাশন ট্রেজেডিতে ৫৭জন শ্রমিকের পরিচয় সনাক্ত করণে, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ৩ ৩২ জন শ্রমিকের পরিচয় সনাক্তকরণে এই ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থায় যে দৃশ্যমান দেখতে চাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষম্যহীন পথে অচিরেই এদেশ বিশ্ব দরবারে অসাধারণ নেতৃত্ব গুনে, অসামান্য সাফল্য গাঁথায় উদ্ভাসিত হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।