রাজশাহীতে ডা. জাহাঙ্গীরের স্বাস্থ্য সেবায় মাস্টারপ্ল্যানে নতুন দিগন্ত
শাকিল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজশাহীর দেশবরেণ্য অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. মোঃজাহাঙ্গীরের স্বাস্থ্য সেবায় মাস্টারপ্ল্যানে নতুন দিগন্ত অবহেলিত উত্তর জনপদে অবশেষে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মানুষের জন্য তৈরি হবে বিশেষায়িত হাসপাতাল। একই সঙ্গে নির্মাণ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত ‘অভিভাবকশূন্য’ অবস্থায় রয়েছে।
এসব চালু করে গণমানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ হাতে নিয়েছেন দেশবরেণ্য অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান।
প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ৬৭। আর রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় উপজেলা রয়েছে ৫৮টি। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৫ জন। আর রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এক কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৯৬৫ মানুষের বসবাস। বিভাগীয় শহরে হাসপাতাল ও বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া তেমন চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। এ দুই বিভাগ ছাড়াও খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ রাজশাহী চিকিৎসা নিতে আসেন।
এসব মানুষের বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য গড়ে উঠছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে টারশিয়ারি লেভেলের চিকিৎসা পাওয়া যাবে। এছাড়া রাজশাহী নগরীর বহরমপুর রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর কড়াইতলা এলাকায় দিঘির পাড়ে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। তবে সেটি এখনো চালু হয়নি। নষ্ট হচ্ছে অযত্ন-অবহেলায়। অথচ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে শত শত শিশু। শুধু শয্যার অভাবে রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে এমনকি সংশ্লিষ্টদের চলাচলের করিডরেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে অনেক শিশু রোগী। সামনে শীতে আরও রোগীর চাপ বাড়তে পারে। এতে তৈরি হবে দুর্ভোগ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মূল ভবন নির্মাণকাজ তিন বছরে শেষ হয়। এরপর ঠিকাদারকে আরো কিছু বাড়তি কাজ দেওয়া হয়। সেই কাজও ২০২৩ সালের জুনের আগেই শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবু চালু হয়নি চিকিৎসা সেবা। এদিকে, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠানো নির্মাণের কাজ। এখানে ১২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে। এছাড়া নগরীতে ক্যানসার হাসপাতাল করা হচ্ছে। এর বাইরেও আরেকটি হাসপাতাল তৈরি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে এ অঞ্চলের প্রায় অন্তত ৪ কোটি দুর্ভোগ লাঘব হবে। এসব নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণের পর কাজ শুরু করেছেন দেশবরেণ্য অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমানের সঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং চিকিৎসক নেতাদের মিটিং হয়েছে। এতে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, ডা. এসআইএম রাজিউল করিম, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব-এর রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন এবং অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শিশু হাসপাতাল চালুর দাবি জানান। এছাড়া রামেক হাসপাতালে সকল রোগীকে বেডে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। প্রয়োজনে নির্মানাধীন ভবনকে ৫ তলা থেকে ১০ তলায় উন্নীত করে ১২ শয্যার হাসপাতালকে ৩ হাজার শয্যা করার দাবি জানান ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। একইসঙ্গে ক্যানসার হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল এবং একটি সদর হাসপাতাল অবিলম্বে চালুর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পাশাপাশি রোগীদের জন্য হাসপাতাল থেকেই সব ওষুধ সরবরাহের কথা তুলে ধরেন।
সভায় স্বাস্থ্য সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এসব প্রস্তাবে সম্মত হন এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। আমরা আলোচনা করেছি এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হবে। আশা করি, রাজশাহীতেই এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমি জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। এ অঞ্চলে অনেক সমস্যা। স্বাস্থ্যসেবায় অনেক বেশি সমস্যায় পড়ে মানুষ। আমি চিকিৎসক হিসেবে এগুলো উপলব্ধি করেছি এবং ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। চিকিৎসা নিতে মানুষের ব্যয় কমাতেও আমি কাজ করবো। আশা করি, সমাধান হবে।
নিষ্ঠা, সততা ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে চাই: রামেবি ভিসি
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে আমাকে রাজশাহী সদর আসনে মনোনীত করা হয়েছে। কর্মসংস্থান চালু, দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা তৈরি, ইপিজেড স্থাপন, পর্যটন কেন্দ্র তৈরি, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার, নারীদের কাজের পরিবেশ, প্রতিবন্ধী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ, আইটি খাতে সুযোগ সৃষ্টিসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আরও বলেন, রাজশাহী রেশমের নগরী। এছাড়া এখানে রয়েছে পদ্মা নদী। কৃষিতেও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিপণ্য পচনশীল হওয়ায় কৃষকরা অনেক সময় নায্যমূল্য পান না। এসব সেক্টর নিয়ে আমি কাজ করবো। পদ্মা ঘিরে পর্যটন ও নির্মল বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করবো। এছাড়া এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেও কাজ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে এসব বাস্তবায়ন করে রাজশাহীকে নম্বর ওয়ান সিটি হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। সেজন্য জনগণের সমর্থন চাই।







