
নিজস্ব প্রতিবেদক:বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রি.।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা আজ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপকারি এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরম শ্রদ্ধেয় ধর্মগুরু, চতুর্থ সংঘরাজ তিলোকানন্দ মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে তিনি প্রয়াত মহাথের’র স্মৃতির প্রতি পু্ষ্পার্ঘ অর্পনের মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, চতুর্থ সংঘরাজ তিলোকানন্দ মহাথের কেবল একজন ধর্মীয় গুরু ছিলেন না, তিনি ছিলেন শান্তি, মৈত্রী ও মানবিকতার আলোকবর্তিকা। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনার প্রসারে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মহাপ্রয়াণ পার্বত্য অঞ্চলের তথা সমগ্র বৌদ্ধ সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য অঞ্চলে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, তিলোকানন্দ মহাথের যে অহিংসা ও করুণার পথ দেখিয়ে গেছেন, তা অনুসরণ করলেই সমাজে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৫০টি বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সকলের হাত সম্প্রসারণ করার আহ্বান জানান।পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বরাবরের ন্যায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। তিনি জানান পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে টিআর, জিআর বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। তিনি পার্বত্যাঞ্চলে কফি ও কাজু বাদাম চাষ বাড়ানোর জন্য তাগিদ দেন।
জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদীর মৃত্যুতে তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শহীদ ওসমান হাদীর আত্নার সৎগতি কামনা করেন।
উপদেষ্টা, রাষ্ট্রদূত (অব) সুপ্রদীপ চাকমা আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠভাবে উপহারের লক্ষ্যে দল, মত নির্বিশেষে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।তাছাড়া তিনি পার্বত্য এলাকায় সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধনে একে অপরের সহযোগী হিসেবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বাঘাইছড়ির রুপকারি এলাকায় তিন দিন ব্যাপী সম্পূর্ণ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের অতিথি ভিক্ষু সহ হাজারো পূনার্থীদের উপস্থিতিতে এই জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপিত হচ্ছে।
উপদেষ্ট সুপ্রদীপ চাকমা মহোদয় প্রয়াত সংঘরাজের মরদেহবাহী কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং একপর্যায়ে বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী বিশ্ব শান্তির মঙ্গল কামনায় সমবেত ধর্মীয় প্রার্থনা সভা ও নানাবিধ দানীয় কার্যক্রমে অংশ নেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা তাঁর বক্তব্যের শেষে শোকসন্তপ্ত শিষ্য সমাজ ও দায়ক-দায়িকাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক শৃঙ্খলা ও আয়োজনের প্রশংসা করেন।
সংঘরাজ তিলোকানন্দ মহাথের তাঁর দীর্ঘ জীবনে বহু বিহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সমাজ সংস্কার এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমরন কাজ করে গেছেন।তিনি একাধারে ইউনিলিভার কর্তৃক “সাদা মনের মানুষ”,মিয়ানমার কর্তৃক “অগ্রমহাপণ্ডিত” উপাধি লাভ করেন। তাঁর ত্যাগের মহিমান্বিত আলো বাঘাইছড়িসহ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে ও শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ০২ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ এ মহান ধর্মীয় গুরুর প্রয়ান হয়।
ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথেরোর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) সুদত্ত চাকমা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমাসহ উপস্থিত পুন্নার্থীগন প্রয়াত ভান্তেকে শ্রদ্ধায় সিক্ত রেখে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী, শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।






