

আসসালামু আলাইকুম। আজ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ছাড়াও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি, জুলাইয়ের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা/বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে ওত পেতে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে দলগুলোকে সচেতন থাকা, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ এর অগ্রগতি পর্যালোচনা, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সার্বিক নিরাপত্তা পর্যালোচনা, ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর। আপনারা জানেন, এর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংখ্যা নিবিড় ও সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এবং প্রকৃত অপরাধী ও মদদকারীদের শনাক্তকরণের জন্য এখনই সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তদন্তের স্বার্থে যে অংশটুকু জনসমক্ষে প্রকাশ সম্ভব, তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
মামলা চলাকালীন এ যাবত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো: ১. ঘটনার মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির ; ২. মা হাসি বেগম; ৩. স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া; ৪. শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ; ৫. গার্লফ্রেন্ড মারিয়া আক্তার লিমা; ৬. মোঃ কবির; ৭. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল; ৮. সিবিয়ন দিও; ৯. সঞ্জয় চিসিম; ১০. মোঃ আমিনুল ইসলাম রাজু; ১১. মোঃ আব্দুল হান্নান। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ০৬ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ০৪ জন সাক্ষীও ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য প্রদান করেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জব্দকৃত উল্লেখযোগ্য আলামতসমূহ হলো: হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন ও ছোরা; হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট; ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গুলির খোসা, বুলেট, ভিডিওচিত্র সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য আলামত এবং প্রায় ৫৩টি একাউন্টের মোট ২১৮ (দুই শত আঠারো) কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অগ্রগতি বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় ডিএমপি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত রয়েছে- তা উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সাক্ষীদের জবানবন্দি, উদ্ধারকৃত আলামত পর্যালোচনা ও সার্বিক বিবেচনায় মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে (০৭ জানুয়ারি ২০২৬) এ মামলার চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি। আমি সবাইকে এ বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করছি। আমরা অতিদ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এবং যারা এর পেছনে জড়িত রয়েছে তাদের নাম, ঠিকানা সহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসম্মুখে উন্মোচন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুততার সাথে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে ফ্যাসিস্টের দোসর, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা অনবরত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য সবাইকে অনুরোধ করবো- আমরা যেন এমন কোনো কাজ না করি যা আমাদের শত্রুপক্ষকে শক্তিশালী করবে এবং হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।
আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই- বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে ইনশাআল্লাহ ।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে ওত পেতে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে দলগুলোকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী ভালোভাবে না জেনে ফ্যাসিস্টের দোসর, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের তাদের দলে স্থান দিচ্ছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করবো- এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে আপনারা সচেতন হোন, দলের ভেতরে আড়ি পেতে থাকা সুযোগসন্ধানী, সুবিধাবাদী ও খোলস পাল্টানো দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করুন, এদের থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন। তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে চালু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অভিযানে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৯৯৯৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া এ অভিযানে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৫৩ রাউন্ড গুলি, ১৬৯ রাউন্ড কার্তুজ, ৮৯টি দেশীয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গান পাউডার, আতশবাজি, বোমা তৈরির উপকরণ, ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে ১২,৩৪৮ জন সহ সর্বমোট ২২,৩৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল আসামি মো. রুবেল (৪১)-কে গত ২৬ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গত ২২ ডিসেম্বর খুলনা মহানগরীতে মোতালেব সিকদার (৪২), কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় শ্রমশক্তি’কে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনার অন্যতম আসামি ডি. কে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীমসহ মোট ০৩ জন সন্দিগ্ধ আসামিকে র্যাব গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাচেষ্টা সংঘটিত হয়েছে।এই ঘটনার পর বিজিবি তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে। যশোর রিজিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ১৮ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ময়মনসিংহে ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস (২৮)-কে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় র্যাব ০৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা পৃথক পৃথক অভিযানে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬টি ককটেল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ১২ ড্রাম, অন্যান্য কেমিক্যাল ৭ ড্রাম, তিনটি বই ও স্প্লিন্টার উদ্ধার করেছে। এ ঘটনার মূল হোতা আলামিন পলাতক রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলা রয়েছে। র্যাব গতকাল (২৭ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা হতে আলামিনের সহযোগী আহসান উল্লাহ ওরফে হাসানকে গ্রেফতার করেছে।
গত ৩০ নভেম্বর খুলনা আদালত চত্বরে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় র্যাব বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অন্যতম আসামি মোঃ ইজাজুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।
মূলতঃ এসব বিষয় নিয়ে কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ।
















