জিয়াউর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার:
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভার আনন্দবাগ গ্রামের আহাদ আলী একজন শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধি। তিনি কোন কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী সাজেদা ও ৩ সন্তান মিলে ৫ সদস্যের সংসার তাদের। নিজেদের কোন জায়গা জমি নেই। তাদের অসহায় জীবনের অবস্থা দেখে গ্রামের তৌফিকুল ইসলাম টুকু নামের একব্যক্তি নিজ জমিতে আপাতত অস্থায়ী ঝুঁপড়ি ঘর নির্মানের মাধ্যমে মাথা গোজার সুযোগ দিয়েছেন ।
সেখানে অন্যদের দেয়া নানা ধরনের আর্থিক সহযোগীতায় হাজারো কষ্টে তিলে তিলে ঝুঁপড়ি ঘর নির্মানের মাধ্যমে বসবাস করছিলেন সাজেদারা। কিন্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লেগে তাদের সে থাকার ঘরবাড়ি ও যাবতীয় জিনিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন ছোট ছোট ৩ টি সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবেন এমন আহাজারিতে বাতাস ভারি করছেন অসহায় সাজেদা বেগম। এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আনন্দবাগ গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, সাজেদা পরের বাসার কাজে গিয়েছিলেন। দুপুর ১ টার দিকে বাড়িতে কেউ ছিলনা। পাশেই তার ছোট ছেলে সাইফুল খেলা করছিলো। হঠাৎ সে আগুন আগুন বলে চিৎকার দিলে লোকজন দৌড়ে এসে দেখে সাজেদাদের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে। এরপর গ্রামবাসী নেভানোর চেষ্টা করলেও মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
সাজেদা বেগম জানান, মানুষের বাড়ি বাড়িতে কাজ করে যে খাবার পান তা পরিবারের সদস্যরা ভাগাভাগি করে খেয়ে কোন রকমে জীবন বাঁচে তাদের। এর মধ্যদিয়ে তিলে তিলে জমানো অর্থ ও গ্রামবাসীর দেয়া সাহায্যে অপরের জমিতে কোন রকমে থাকার মত ঘর করেছেন। সেই মাথা গোজার ঘরটি সকলের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আবার আগের মত খোলা আকাশের নিচে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে থাকতে হবে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ওই গ্রামের বাসিন্দা শিমুল হোসেন জানান, সাজেদার স্বামী শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। তিনি কোন কাজ করতে পারেন না। তার স্ত্রীর রোজগারে তাদের জীবন চলে। রোজগার নেই ফলে পরিবারটি তাদের গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে অভাবি ও চরম অসহায়। সাজেদা বেগম পরের বাড়িতে কাজ করে যা পান তাই তাদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র সম্বল। ফলে কাজ না থাকলে প্রায়ই তাদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়। এতো কষ্টের মধ্যেও গ্রামের মানুষের সাহায্যের ওপর ভর করে ঝুঁপড়ি ঘর বেধে থাকার সুযোগ করেছিলেন। কিন্ত আগুনে পুড়ে তাদের সব সম্বল শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের ঘর ও মালামাল পুড়ে যাওয়ার ক্ষতিতে শিশুদের আহাজারি দেখলে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
কালীগঞ্জ পৌরসভা ওযার্ডের কাউন্সিলর রুবেল হোসেন জানান, আমি শুনেছি প্রতিবন্ধী আহাদ আলীর ঘর পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এমনিতেই তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে থাকে। তারপর আবার এমন ক্ষতি হয়ে গেলো। এখন অন্যের সাহায্য ছাড়াও তাদের উপায় নেই। তিনি সাধ্যমত সাহায্য করবেন। তাদের ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।