জিয়াউর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নের ডাউটিয়া গ্রামে চলতি মাসে ( ৬ অক্টোবর ২২) শত বছরের কালী প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এঘটনায় তদন্ত শেষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাসের নাম জড়িয়ে পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। এঘটনায় ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নসহ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পরিপেক্ষিতে ১৯ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ (সংখ্যালঘু ও নিপীড়িত মানুষের মুখপাত্র) এর চেয়ারম্যান রবীন্দ্র ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ ঘোষ, ডিএসবির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার প্রথম থেকেই ডাউটিয়া গ্রামের মৃত গাজীর উদ্দীনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহ করছিল এলাকাবাসী। তার আলোকে আশরাফুল কে জিজ্ঞেস করা হয়।পরে কালী প্রতিমা ভাংচুর করার কথা স্বীকার করে।এরপর এলাকার স্থানীদের জনসম্মুখে হাজির করা হলে তিনি জানান, রাতের আধারে প্রতিমা ভাংচুর করেছিলাম বলে স্বীকার করে। এরপর তিনি বলেন মাদ্রাসা আর কালী মন্দির ঘর কখনো একই জায়গায় থাকতে পারে না, আমি আগে অনেকবার বলেছিলাম এখান থেকে সরাতে, তারা আমার কথা শোনেনি, কি করে পুরুষের বুকের উপর পা রেখে মেয়ে মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারে? আমি কারোর নির্দেশে এ কাজ করিনি, আমার মন চেয়েছে তাই করেছি। প্রতিমা ভাংচুরের সময় কেউ সাথে ছিলনা, আমার সাথে ছিল আমার আল্লাহ। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করছে মতিয়ার চেয়ারম্যান আর দিনার কত টাকা দিয়েছে প্রতিমা ভাংচুর করতে? আমি বলেছি তিনারা কোন টাকা পয়সা দেইনি, আমি নিজের ইচ্ছায় ভাংচুর করেছি, তারপর আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি শতবার বলবো, আমি নিজেই প্রতিমা ভাংচুর করছি, আমার জেল হই হোক, আমি এব্যপারে ভয় পায়না।
ঘটনার পরিপেক্ষিতে হিন্দু নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধলরাহচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস। তার ছেলেও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা বাপ বেটা অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র মানুষ। আমরা তাদের কাছে মাতৃছায়ার মতো থাকি। কখনো তাদের কাছ থেকে কোন অন্যায় কাজ হতে দেখিনি। আমাদের পূজাতে তারাই দেখভাল দিয়ে থাকেন, তাদের ছত্রছায়ায় আমরা শান্তিতে বসবাস করছি। স্থানীয়ভাবে তারাই আমাদের রক্ষক। আমরা কখনো বিশ্বাস করিনা, তার ছেলের দ্বারাই আমাদের প্রতিমা ভাংচুর হতে পারে। সেসময় চেয়ারম্যানের উপস্থিততে দিনারের নামে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, আমার টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, ওসি, এসপি ও ডিসির সাথে এবিষয় নিয়ে আলাপ করবো। তবে যিনি প্রতিমা ভাংচুর করেছে, তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছে, সুতরাং নিরপরাধ ব্যক্তিরা সাজাভোগ করুক আমরা তা চাই না। শতভাগ চেষ্টা করবো এ ঘটনায় দোষি ব্যক্তি সাজা ভোগ করুক। মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা এস আই পলাশ ঘোষ জানান, মামলার তদন্তে স্বার্থে কোন কিছু বলতে পারবো না। যেহেতু এ মামলাটি নিয়ে এসপি ও ওসি স্যার নিজেইরাই দেখভাল করছেন। যদি কোন কিছু জানতে হয় সেটি ওসি স্যারের মাধ্যমেই আপনাদের জানতে হবে।
উল্লেখ্য,গত ৬ অক্টোবর রাতে শৈলকুপা উপজেলার ডাউটিয়া গ্রামে শতবছরের পুরোনো কালীমন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট গত ১২ অক্টোবর শৈলকুপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কুশাবাড়ীয়া গ্রাম থেকে এসএম আরব আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান হিরো, একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ ও পাঞ্জাবী আলী খানের ছেলে তুষারকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।