শাহীন আলম,জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা ঃ
বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে ব্যাপকহারে কুকুরকে টিকা দান (এমডিভি) কার্যক্রম উপলক্ষ্যে কলারোয়ায় অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবর
রহমান সেন্টু সভাপতিত্বে , ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন-সাতক্ষীরা কলারোয়া পৌরসভার মেয়র মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, কলারোয়া উপজেলা মহিলা
ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ নাজনীন খুকু, কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা, কলারোয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই নুর মোহাম্মাদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেডিনারী সার্জন ডা: সাইফুল ইসলাম, সাবেক বিআরডিপির সভাপতি মশিয়ার রহমান বাবু,
কলারোয়া পৌর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সহ.সভাপতি সরদার জিল্লুর। এমডিভি কার্যক্রম সম্পর্কে স্বাগত বক্তৃতা করেন এমডিভি ফিল্ড সুপারভাইজার রাসেল খন্দকার,কলারোয়া হাসপাতালের আরএমও ডা: শফিকুল ইসলাম সহ স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও বিভিন্ন
ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকবৃন্দ। উল্লেখ্য-কলারোয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে একযোগে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানের বক্তরা বলেন, জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি, এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ,
জলাতঙ্গ রোগ মুলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে ছড়ায়, এছাড়া বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় ও আঁচড় থেকেও হতে পারে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষ জলাতঙ্কে মারা যেত এবং গবাদী পশুর মৃত্যুর সংখ্যা অগনিত ছিল। ২০১১ সাল থেকে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষ
কর্মসূচির মাধ্যমে এটি ২০১৬ সালে ৯০% এর নিচে নামিয়ে আনে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্ক মুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন সরকার, যার মধ্যে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম অন্যতম, জলাতঙ্ক একটি তীব্র ভাইরাল সংক্রমণ যা প্রায় সবসময়ই মারাত্মক। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, বানরের মাধ্যমে সংক্রমন
হয়ে থাকে, প্রথম পর্যায়ে বাদুড় থেকে এই ভাইরাস অন্যপ্রাণি বহন করে সব শেষে মানুষে দেহে প্রবেশ করে, আক্রান্ত মানুষের মাধ্যমে অন্য মানুষ সংক্রমনিত হয় না, এ জন্য বেশি বেশি সচেতনতা দরকার। এমনকি আক্রান্ত প্রাণি থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করার আগে প্রতিরোধ করা গেলে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু প্রাণীর
লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। বিপথগামী কুকুরগুলি সংক্রমণের সবচেয়ে সম্ভাব্য উৎস, সে কারণে পোষা প্রাণীদের টিকা দেওয়া হয়। যদি একটি উন্মত্ত প্রাণী একজন ব্যক্তির উপর একটি খোলা ক্ষত চাটতে পারে, তাহলে ভাইরাসটি সহজে সংক্রমণ হতে পারে। মাথা এবং ঘাড়ের ক্ষতগুলি আরও বিপজ্জনক কারণ সংক্রমণ দ্রæত মস্তিষ্কে
পৌঁছাতে পারে। জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি রোগের শেষ পর্যায়ে দেখা যায় না, এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এনসেফালাইটিস সৃষ্টি করে এবং এর পরেই মৃত্যু ঘটে। প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল: মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, জ্বর এবং কামড়ের জায়গায় খিঁচুনি।
অত্যধিক লালা নিঃসরণ, গিলতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধার কারণে পানির ভয়, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, অনিদ্রা এমনকি আংশিক পক্ষাঘাত এবং কখনও কখনও কোমার মতো লক্ষণগুলি জলাতঙ্কের ইঙ্গিত দেয়। ব্যক্তি শব্দ, আলো এবং এমনকি বাতাসের ভয় দেখা যায়। বক্তরা আরো বলেন,
জলাতঙ্ক ৩টি স্থরের ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রথমত যদি কোন মানুষকে কুকুর, বিড়াল বা শিয়ালে কামড়ে বা আঁচড় বা জিহ্বা দিয়ে কোন স্থানে চাটতে পারে তাহলে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের না হয় সেক্ষেত্রে ওই স্থানে সাবান পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার জাতীয় জিনিস দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ধরে ধুতে ফেলতে হবে। ২য় স্থরে যদি কোন
ব্যক্তিকে কামড় দেয় সেই স্থান থেকে রক্ত নিগত হতে থাকে তাহলে ক্ষত স্থান চেপে ধরে রাখতে হবে এবং সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনকি ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্থাস্থ্য কমপ্লেক্স এসে কিংবা রেজিস্টার্ড ডাক্তারের নিকট হতে ভ্যাক্সিন গ্রহন করতে হবে। ৩য় স্থরে আক্রন্ত ব্যক্তিকে যদি একাধিক স্থানে কামড়িয়ে জখম করে থাকে
সেক্ষেত্রে যতদ্রত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেখানে ডাক্তারের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জলাতঙ্ক সাথে সাথে ছড়িয়ে না পড়লেও এটি ১০/১৫ বছর পরেও লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই ঝাঁড় ফুক না দিয়ে রুগকে সরাসরি চিকিৎসকের নিকট নিয়ে এসে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনতে হবে। মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা যায়
তাহলে দেশ থেকে জলাতঙ্ক কমে যাবে। সে জন্য বিপথগামী কুকুর, পোষা প্রাণীদের টিকার আওতায় আনতে হবে। এজন্য এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।