তেতুলিয়া পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
প্রযুক্তির উৎকর্ষে নাগরিক জীবনে মিলেছে সহজীকরণ সেবা। হাতের মুঠোয় মোবাইলে ক্লিক করলে সেবা মিলে নানা কিছুর। সেই নাগরিক সেবা প্রদানে পেছনের কারিগরি হিসেবে কাজ করে কিছু মানুষ। তারা নিভৃতে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেন জন মানুষের সেবা। এরকম এক তরুণ দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা কবির হোসাইন।
দেশের উত্তরের পঞ্চগড় জেলার তেতাল্লিশটি ইউনিয়ন পরিষদ এবং তিনটি পৌরসভায় প্রথম চালু হয়েছে ডিজিটাল ও স্মার্ট লেনদেনের ক্যাশলেস সেবা। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহার উদ্যোগে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেনের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের নাগরিকদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ সেবা
সহজীকরণের জন্য নির্মিত ইউনিয়ন ট্যাক্স ডট গভ ডট বিডি নির্মানের পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করছে কবির। তার ওয়েব ভিত্তিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান সফটওয়েব সিস্টেম সল্যুশন। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলায় এ ডিজিটাল ক্যাশলেস সেবা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
‘ডিজিটাল ও ক্যাশলেস ইউপি সেবা সিস্টেম’ বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় বিশেষ অবদানের জন্য কবির হোসাইনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ। সোমবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ফেব্রæয়ারি মাসের উপজেলা পরিষদ সভায় সম্মাননা স্মারক
তার হাতে তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা। একই সাথে তিরনইহাট ইউনিয়নে ক্যাশলেস সেবা বাস্তবায়নে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে ইউপি সচিব হারুণ অর রশিদকে।
তেঁতুলিয়ার সীমান্ত ঘেষা শারিয়ালজোত গ্রামে বেড়ে উঠেছিল কবির। প্রযুক্তির প্রতি বেশ আগ্রহ বেশ থাকায় ২০০৭ সালে স্থানীয় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বেসিক কোর্স করে সেখানেই কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে কোন রকমে উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে
উপজেলা পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেয়ে যান। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), অনলাইনে আইসিটি বিভাগের লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা
একাডেমী (নেকটার)সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছেন ওয়েব সাইট ডেভেলপমেন্ট ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ। চাকরীর পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের স্বণামধন্য বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইভিনিংয়ে মাস্টার্স অভ্ বিজনেস এডমিনিট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
চাকরীর পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ তরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্রিলান্সার হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসসহ অফলাইনে কাজে করে পরিবারে যোগান দিচ্ছেন বাড়তি আয়ের। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রশাসনের
সহযোগিতায় ক্যাশলেস ইউপি ও পৌর সেবা সিস্টেম ইউনিয়ন ট্যাক্স ডট গভ ডট বিডি তৈরীতে কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়নের সাথে কারিগরি সহায়তা প্রদানের কাজ করছে তার সফটওয়েব সিস্টেম সল্যুশন নামের এ
প্রতিষ্ঠানটি। এসব উদ্ভাবনী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদেরকে ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দ্রæত সময়ে সেবা প্রদান নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে অনলাইনে গভীর/অগভীর নলকূপ স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান সেবা
সহজীকরণ, রাসায়নিক সারের অহেতুক মূল্য বৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট নিরসন রোধ, কৃষকদের সুষ্ঠুভাবে সার বিক্রয়ে ডিলারদের অনুকূলে প্রদত্ত বরাদ্দ, বিক্রয় ও মজুদ সংক্রান্ত বিষয় মনিটরিং ও দ্রæত সময়ে জবাবদিহিতা মূলক সেবা প্রদান
নিশ্চিতকরণে ইন্টিগ্রেটেড মনিটরিং সিস্টেম অনলাইন ডিজিটাল সার ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরি। ‘সৃষ্টি’ নামক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতায় জন্ম নেয়া শিশুর তথ্য সংগ্রহ পূর্বক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধনকরণ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দপ্তর কর্তৃক
প্রদানকৃত এ সকল সেবার তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ও সেবাসমূহ সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রসূতি মায়ের তথ্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে সংরক্ষণ করে একই জায়গা থেকে গর্ভকালীন ও প্রসব সেবা প্রদানের তথ্য, নবজাতকের ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিজিটাল টিকা কার্ড প্রদান, জন্ম ও
মৃত্যু নিবন্ধক কার্যালয়ে শুন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা সহজীকরণের জন্য ‘তেঁতুলিয়া ডট গভ ডট বিডি’ নামের অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরিতে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে এ উপজেলায় তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ সাড়া ফেলেছেন কবির।
উদ্যোক্তা কবির হোসাইন জানান, কারিগরি কাজে সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে আমাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করায় উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মহৎ কাজে ক্ষুদ্র সহযোগিতা করতে পেরে এবং আজ এই সম্মাননা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট প্রযুক্তির সেবার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজে যুক্ত হয়ে পিছনের কারিগর হিসেবে সর্বদা কাজ করে যেতে চাই।
ডিজিটাল ক্যাশলেস বিষয়ে কবির হোসাইন জানান, সুইডেন, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও চীনের মতো দেশে অধিকাংশ মানুষ নগদ অর্থে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কাগুজে নোটের পরিবর্তে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনে তারা অভ্যস্ত। যা সহজ এবং নিরাপদ। বাংলাদেশেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’–এর অংশ হিসেবে যে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন খুব সহজেই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ক্যাশলেস লেনদেন’। ২০৪১ সালে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি ডিজিটাল লেনদেন হিসেবে ঢাকার পর ক্যাশলেস যুগে প্রবেশ করেছে
পঞ্চগড়। ইতোমধ্যে এই জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদে যুক্ত হচ্ছে ক্যাশলেস সেবা। এর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রদত্ত ২০টি সেবা অতি সহজে যে কোন স্থান থেকে ঘরে বসে ইউপি ও পৌর সেবা গ্রহণ করতে পারছেন সেবাগ্রহিতারা।