ফিরোজ হোসেন বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
বাংলা ১৪২৯ সনের পয়লা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছরের জন্য নওগাঁর বদলগাছীর কোলাহাটটি ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছিল। এই টাকার সঙ্গে আরও ১০% আয়কর ও ১৫% ভ্যাট ( মূল্য সংযোজন কর) যোগ হয়ে হাটটির ইজারা মূল্য কোটি টাকার ওপর। অথচ সেই কোলাহাটটি এবার বাংলা ১৪৩০ সনে মাত্র ৫৬ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এই ভাগ্যবান ইজারাদার হচ্ছেন নওগাঁজেলা যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়। কোলা হাটের যে তিন জন দরপত্র দাখিল করেছেন তার মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা বিমান কুমার রায়। গত বারের তুলনায় এবার প্রায় ৩৪ লাখ টাকা কমে তিনি হাটটি ইজারা পেতে যাচ্ছেন। এতে মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার । আবার ইজারার টাকা কমে যাওয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদেরও হাটের টাকার বরাদ্দ কমে যাবে। অভিযোগ রয়েছে, দরপত্র দাখিলের
দিনে বাধা দেওয়া হয়েছিল। একারণে অন্যরা দরপত্র দাখিল করতে পারেনি। তিনজন ব্যক্তি যোগসাজশ করে দরপত্রদাখিল করেছিলেন। অন্যরা সবাই দরপত্র দাখিল করতে পারলে আয়কর ও ভ্যাট বাদে কোটি টাকার ওপরে হাটটি ইজারাহতো। সরকারি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পুনরুদ্ধারে হাটটি ফের দরপত্র আহ্বানের দাবি উঠেছে। এবার হাট-বাজার ইজারাবিজ্ঞপ্তিতে হাটটির সরকারি সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ( আয়কর ও ভ্যাট ব্যতীত) ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০টাকা।শিডিউলের মূল্য ১২ হাজার ৮০০ টাকা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল শিডিউল বিক্রির শেষ দিন। পরেরদিন ১৬ফেব্রুয়ারি শিডিউল জমা দানের শেষ দিন ছিল। ওইদিন বিকেল তিনটায় শিডিউল বাক্স খোলা হয়। উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শেষ দিন পর্যন্ত কোলা হাটের মোট ১২ টি শিডিউল বিক্রি হয়। এর মধ্যেপরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউএনও কার্যালয়ে রক্ষিত বাক্সে তিনটি
শিডিউল জমা পড়ে। নওগাঁজেলা যুব লীগের সাধারণসম্পাদক বিমান কুমার রায়, ৫৬ লাখ টাকা, আক্কেলপুরের ফেরদৌস হোসেন ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও মহাদেবপুরেরএনামুল হক ৫১ লাখ টাকা দর হাঁকেন। বিমান কুমার রায় সর্বোচ্চ দরদাতা। তিনি সরকারি সম্ভাব্য দরের চেয়ে ১৩ হাজার৬০০ টাকা বেশি দর দিয়েছেন। গত ১৪২৯ সনে কোলা হাটের সরকারি সম্ভাব্য দর একই ছিল। ইজারায় প্রতিযোগিতাহওয়ায় ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় হাটটি ইজারা হয়েছিল। হাটের ইজারা থেকে ২০% হারে কোলা ইউনিয়ন পরিষদ ১৭ লাখটাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ইজারাদার আবুসাঈদ বলেন, আমরা কোলা হাটটি প্রতিযোগিতা করে ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়ইজারা পেয়েছিলাম। এবারও কোলা হাটের শিডিউল
কিনেছিলাম। আমাদের শিডিউল জমা দিতে দেওয়া হয়নি। আমরা এবারকোটি টাকার কাছাকাছি হাট ইজারার দর দিয়েছিলাম। ইজারা টাকা বাড়ে, কিন্তুকমে না। যদি দরপত্র বাতিল করে ফেয়ারড্রপিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কোটি টাকা ইজারা ডাক হবে। শ্রীরামপুর হাটের শিডিউল কিনেছিলেনআক্কেলপুরের মোমিনুল ইসলাম। তিনি শামীম নামে এক প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে শিডিউল জমা দিয়েছিলেন। শামীম বলেন, সেদিন কোলা হাট ও ভান্ডারপুর হাটেরশিডিউল জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। অন্য হাটগুলোর শিডিউল জমা দিলেকোনও বাধা দেওয়া হয়নি। নওগাঁজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায় বলেন, আমি কোলা হাট ইজারারশিডিউল জমা দিয়েছি। আমি হাটের সর্বোচ্চ
দরদাতা। আমার সঙ্গে আরও পার্টনার আছে। কত টাকা দর দিয়েছেনএমনপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মূহুর্তে আমার দরের কথা মনে হচ্ছ না। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুরইসলাম স্বপন এইপ্রতিনিধিকে বলেন, গতবারে কোলা হাটটি ৮৯ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছিল। ২০% হারে ১৭ লাখ টাকাইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দ পেয়েছিল। এবার যেহেতুইজারার টাকা কমেছে। তাই ইউপির বরাদ্দের টাকার অংকও কমে যাবে।বদলগাছী উপজেলার হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলেন, করোনাকালীন সময়েকোলাহাট
ইজারা হয়নি। একারণে সরকারি সম্ভাব্য গড় মূল্য কমে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে। আগামী ১৪৩০সনের জন্য পয়লা বৈশাখ থেকে নতুন করে হাটটি ইজারার আহ্বান করা হয়েছিল। কোলাহাটের তিনজন দরপত্র দাখিলকরেছেন। এর মধ্যে বিমান কুমার রায় নামে একজন সর্বোচ্চ ৫৬ লাখ টাকা দর দিয়েছেন। এখন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।গত বছরের চেয়ে কেন এবার ইজারার টাকা কমে গেল এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, সরকারি সম্ভাব্য দরের চেয়ে বেশি দররয়েছে। বদলগাছী উপজেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী বলেন, করোনার পর ১৪২৯ সনেকোলা হাটটি সরকারি সম্ভাব্য দরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে ইজারা হয়েছিল। এখন সবকিছুই স্বাভাবিক। অথচ হাটেরইজারা মূল্য কমেছে।এতেইঅনুমান হচ্ছে যে যোগসাজশ করে হাটের দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। তিনিসহ উপজেলারসচেতন মহল কোলাহাটের এই দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বানের জোর দাবি জানিয়েছেন।