কাপ্তাইয়ের ডংনালা গ্রামে আধুনিক যুগেও নেটওয়ার্ক নেই
রিপন মারমা,সত্যকন্ঠ; রাঙ্গামাটি:
রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ডংনালা গ্রামে এখন ভোগান্তির এক নাম মোবাইল নেটওয়ার্ক।
মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় দুর্ভোগে ১০ হাজার গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ নেই।
আধুনিক যুগেও মোবাইলের মাধ্যমে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।স্থানীয় সাবেক মেম্বার মংনুচিং মারমা জানান,
ঐতিহ্যবাহী ডংনালা গ্রামে টাওয়ার স্থাপনের জন্য স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যাবে।ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে অনেকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে হয়।
কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’পূর্ব কোদালা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক উচপ্রু মারমা বলেন,এখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে যোগাযোগ বা অনলাইন ক্লাস করতে পারছি না। তা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা কাজ নিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাই এখানে একটি টাওয়ার স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,কাপ্তাই উপজেলা রাইখালী ইউনিয়ন নাম নাজানা কয়েকটি গ্রাম আছে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তবে এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত নেটওয়ার্ক নেই। অন্যান্য ডিজিটাল সেবা তো নেই-ই।
দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সেবা এখন পৌছে গেছে ঘরের ঘরে। অথচ কাল্পনিক মনে হলেও বাস্তব যে রাইখালীএই ইউনিয়নটিতে ঐতিহ্যবাহী ডংনালা গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
করোনা পরিস্তিতির সময় সারা দেশে প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখানকার শিশুরা ছিল নেটওয়ার্ক থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয় শিক্ষার্থী উকিংপ্রু মারমা,বলেন,
নেটওয়ার্কে যতো ডিজিটাল সুযোগ সুবিধা আছে তা আমরা পাচ্ছি না। আমাদের নেটওয়ার্কের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি মোবাইল টাওয়ারের সুব্যবস্থা করে দিলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবো।
পাশাপাশি আমাদের এলাকার প্রবাসীদের সুবিধা হবে।স্হানীয় বাসিন্দা কার্বারী সহধর্মিণী মেমাঞো মারমা উৎকণ্ঠের মারমা ভাষা দিয়ে বলেন, ঐতিহ্যবাহী ডংনালা গ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে এসেছি আগেতো
মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল এখন বর্তমানেও আধুনিক যুগেও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা ভুগতে হচ্ছে এলাকার সকলকে।কবে যে মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা দুর হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি মহিলা মেম্বার মাচিংউ মারমা বলেন,আমার নির্বাচিত ঐতিহ্যবাহী ডংনালা এলাকার মূল সমস্যা হচ্ছে নেটওয়ার্ক। এখানে জরুরি প্রয়োজনে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না।
আমরা এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য জরুরি প্রয়োজন মোবাইল নেটওয়ার্কের।
তিনি বলেন, এখানে বিদ্যুৎ আছে এবং যোগাযোগের ব্যবস্থাও ভালো। তাহলে কি জন্য নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হয়না?
স্থানীয় অভিভাবকদের দাবী, তাদের সন্তান যেন অত্যন্ত জরুরি নেটওয়ার্কের এই সুবিধাটি পায়। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নেই মোবাইল নেটওয়ার্কের
সুবিধা। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানে ঘরে বসে ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছে, সেখানে এসব এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনসাধারণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয় কয়েকজন জানান,
অফিস আদালতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেটওয়ার্ক না-থাকার কারণে প্রাত্যহিক কাজ গুলো করতে ঘটনার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও কাজ হয়না। দীর্ঘদিন ডংনালা এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকলেও ওই এলাকায় কোন মোবাইল কোম্পানি টাওয়ার
স্থাপন না করায় কারণে এই গ্রামের ১০ হাজার মোবাইল গ্রাহকের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।সৌদি আরব প্রবাসী সুইসিংমং মারমা বলেন, দেশে আমার পরিবার রেখে আমি প্রবাসে দীর্ঘ বছর ধরে সৌদি আরব
গিয়ে ছিলাম । কিন্তু দুঃখের বিষয় মাসে একবার হলেও ফোনে কথা বলতে পারেনি এখন ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছি।আজ আমরা নেটওয়ার্কের এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।তিনি আরও বলেন, প্রবাস থেকে দেশে নিজের পরিবারের সাথে আমার
বাড়িতে সরাসরি কল দিয়ে কথা বলতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পারিনি কথা বলতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কারণে। ইমো-হোয়াটসঅ্যাপে’র মাধ্যমে কথা বলাটা অনেক দূরের স্বপ্ন। তাই বর্তমান সময়ের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া যেন আমাদের গ্রামের মানুষ পায়।
আমরা যেন প্রবাসে থেকে অন্তত পরিবারের সাথে একটু কথা বলতে পারি। এই ব্যবস্থা করার জন্য সরকার ও বেসরকারী নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর কাছে আমরা ঋণি হয়ে থাকব।ডংনালা শাক্য নন্দ বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ উসুরিয়া ধর্মগুরু বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে।
সেখানে নেটওয়ার্কের মতো একটা প্রযুক্তি নেই! এটা কোন আহামরি কিছু নয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাইলে এটা সমাধান করতে পারেন। সারা দেশব্যাপী যখন করোনা মহামারি ছিল তখন দেশের শিক্ষা-
প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা তখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাঠদানে অংশগ্রহণ করে কিন্তু আমাদের এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
অনুসন্ধানে জানা যায় দীর্ঘবছর ধরে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে চলতে হচ্ছে রাইখালী জুমিয়া পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ডংনালা বটতলী লামার পাড়া,সিংডং পাড়া,তম্ব্রো পাড়া, তংসিং পাড়া, চাইনজালিপাড়া ,বটতলী উপর পাড়া, পূর্ব
কোদালা,খন্দা পাড়া, ডংনালা উচ্চ বিদ্যালয় সহ বৃহত্তর ডংনালা এলাকা। ভৌগলিক কারণে কাপ্তাই উপজেলাধীন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেটওয়ার্ক না পাওয়ার কারণে ইন্টারনেটের সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডংনালা এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-লার্নিংসহ বেশির ভাগ কাজ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক। পোস্ট ই-সেন্টারে অনলাইন ব্যাংকিং, চাকরিসহ বিভিন্ন আবেদন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পরীক্ষার ফলাফল ও বিভিন্ন নাগরিক সেবা রয়েছে।
কিন্তু নেটওয়ার্ক গতিশীল না থাকায় এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ। জরুরি কোনো প্রকার খবরাখবর আদান-প্রদান করতে পারছে না।
পার্শ্ববর্তী অন্য টাওয়ারের দূর্বল নেটওয়ার্কের কারণে নষ্ট হচ্ছে মোবাইল গ্রাহকদের ব্যবহৃত এমবি।এতে করে গ্রাহকদের অর্থের অপচয় হল কাঙ্খিত মোবাইল নেটওয়ার্কের সেবার ভোগান্তির শেষ নেই।গ্রামীণফোন,
টেলিটক,রবি, এয়ারটেল কোনটারই অত্র এলাকায় টাওয়ার স্থাপন না হওয়ায় দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বিধবাভাতা টাকা তুলতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় দিনের পর দিন।
এছাড়াও ডংনালা থেকে বিদেশে যাওয়া বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য বিড়ম্বনার শিকার হয়ে এখন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়।এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে। সরলমনা গ্রামবাসীরা আক্ষেপ করে জানায় স্থানীয় বিকাশ এজেন্ট দোকানদারদের কাছে, জানতে চায়
মোবাইলটা নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না কেন ? এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অনলাইন চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে পক্ষান্তরে অনলাইনে থানায় জিডি করতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি দ্রুত মোবাইল
নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য যে কোন মোবাইল কোম্পানির একটি টাওয়ার যেন ডংনালা এলাকায় স্থাপন করা হয়, মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিপূর্ণ পাওয়া গেলে স্মার্ট রুপে ডংনালা গ্রাম গড়ে উঠবে অল্প সময়ের ব্যবধানে। পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে গড়তে হলে আগে স্মার্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রয়োজন।