কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ঢল
পটুয়াখালী প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক :
তিন দিনের সরকারী ছুটিকে ঘিরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনও পর্যটকদের কমতি নেই।
মধু পুর্নিমার প্রভাবে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ আর ঢেউয়ের গর্জন উপভোগ করছেন লক্ষাধিক পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। শুক্রবার ভোর রাত থেকে ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর বৃষ্টি উপেক্ষা করে পর্যটকরা সমুদ্রে গোসল ও হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো শতভাগ বুকিং রয়েছে।
আগত পর্যটকরা লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবন, গঙ্গামতির চর ও বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউবা ঘুরছেন ঘোড়া কিংবা ওয়াটার বাইকে। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন সমুদ্রের তীরের আছড়ে পড়া বড় বড় ঢেউ।
বর্তমানে সৈকতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আগত পর্যটকের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত ট্যুরিষ্ট পুলিশ।খাবার হোটেল থেকে শুরু করে ঝিনুক মার্কেট সব খানেই ভীড় দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় দেড়’শ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।ফরিদপুর থেকে আগত পর্যটক মশিউর রহমান খোকন বলেন, আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।
এখানে আসলে মন জুড়িয়ে যায়। সমুদ্রের ঢেউ আর ঢেউয়ের গর্জন উপভোগ করেছি। যে অনুভূতি কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন,কুয়াকাটার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তারা কম সময়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই কুয়াকাটা আসতে পেরে খুশি।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক দম্পতি ইয়ামিন দম্পতি জানান, তিন ছুটিতে তারা কুয়াকাটা ভ্রমণে এসেছেন। সমুদ্রে গোসল সহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। খুব ভালো লেগেছে।
তবে আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিকরা রুম ভাড়ার উপর পর্যটন দিবস উপলক্ষে ৪০-৫০ ভাগ ছাড়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা। পর্যটকদের অতিরিক্ত ভীড়কে পুঁজি করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। খাবার হোটেল গুলোতেও অতিরিক্ত দাম নেয়া হয়েছে।
অনেক আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক কতৃপক্ষ অনেক পর্যটকদের তিন দিনের বুকিং দিয়ে আসার পরে একদিনের জন্য রুম দিয়েছে। বেশি ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে বুকিং বাতিল করেছে বলে অভিযোগ তাদের। জেলা প্রশাসন এবং বীচ ম্যামেজমেন্ট কমিটির তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকই।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আবাসিক হোটেল গুলোর বেশির ভাগই আগাম বুকিং হয়েছে। তাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকে সে বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তবে পর্যটক সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাচনাইন পারভেজ জানান, অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপকে মাথায় রেখে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও বিশেষ নজরদারি রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কোন পর্যটক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান ক্যামেরাম্যানদের বিরুদ্ধে কয়েকজন পর্যটকরা অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।