চৌদ্দগ্রাম থানা চত্বরের শোভা বর্ধনে গড়ে উঠেছে সু-সজ্জিত সবজি বাগান
মোঃ খোরশেদ আলম
বিশেষ সংবাদদাতা
সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত থাকলেও চৌদ্দগ্রাম থানা চত্বরের ওসি শুভরঞ্জন চাকমা সরকারের উদ্যোগে পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সু-সজ্জিত বিষমুক্ত সমন্বিত পেঁপে, বেগুন, বরবটি সিম, করলা,আম গাছের বাগান, লিচু গাছ,ডালিম,ফুল ও ফলের বাগান।
বর্তমানে পুরো থানা চত্বর যেন একটি সবুজের বেষ্টনীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যা সাধারণ মানুষদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নিজেদের বাড়ির আশেপাশের পরিত্যক্ত জমি ফেলে না রেখে সেখানে একটু সময় আর শ্রম দিয়ে সবজির বাগান তৈরি করে সেখানে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজিতে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আশেপাশের মানুষদের মাঝেও সরবরাহ সম্ভব তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত থানা প্রাঙ্গনে গড়ে তোলা এই বিষমুক্ত সমন্বিত সবজির বাগানটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের এক খন্ড জমিও যেন অনাবাদী পড়ে না থাকে। ফসল উৎপাদনে বেশি নজর দিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে থানা চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সমন্বিত সবজির বাগান।
চৌদ্দগ্রাম থানায় সেবা নিতে আসা গ্রামের লোকজনের মুখে মুখে উন্নয়নের কথা প্রকাশ করেন থানার পরিবেশ নিয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, একসময় দেখেছি থানা চত্বরকে মনে হতো একটি ছোট-খাটো জঙ্গলের মতো। এখানে সেখানে পড়ে থাকতো ময়লা আর আবর্জনা।
কিন্তু এখন থানায় এসে কাজ শেষে পুরো চত্বরটিকে একবার ঘুরে না দেখলে মনে একটি অতৃপ্তি থেকে যায়। বিশেষ করে সবজির বাগান, মসজিদ সংলগ্ন স্থানে ফুলের ছোট্ট বাগান ও থানার মূল ভবনে প্রবেশ করতেই সুসজ্জিত ফুলের বাগান দেখে চোখ জুড়ে যায়।
অন্যান্য থানায় এমন পরিবেশ সচরাচর চোখে পড়ে না। এই বাগানগুলো দেখে আমি যেমন অভিভূত হয়েছি তেমনি ভাবে অনুপ্রাণিতও হয়েছি। আমরা যদি এমনি ভাবে নিজেদের পরিত্যক্ত জমিতে এই ধরণের শখের বাগান তৈরি করি তাহলে আমরাসহ পুরো বাংলাদেশ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশপাশি আর্থিকভাবেও অনেক লাভবান হতে পারি।
আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারেকুর রহমান সরকার বলেন, মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন পরিত্যক্ত পড়ে না থাকে’ সেই মোতাবেক পূর্বের স্যারদের বাগান গড়ে তোলার সূচনাকে আমি বৃহৎ আকারের রূপ দান করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি এই থানায় যোগদানের পরই পরিত্যক্ত সকল জমিগুলোতে চাষাবাদ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করি।
তারই ধারাবাহিকতায় থানার উত্তর দিকে ছোট্ট একটি বাগান ছিলো সেটাকে সম্প্রসারিত করে সেখানে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করি। বর্তমানে বাগানে বেগুন, মরিচ, ধনিয়া, পুঁইশাক, লালশাক, সবুজশাক, ঢেড়স, পেঁপে, সজনে, লাউসহ বিভিন্ন সবজির গাছ শোভা পাচ্ছে।
আমরা যারা থানায় কর্মরত আছি তারা সবাই সাধ্যমতো এই বাগাটিতে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। এতে করে এই বাগান থেকে আমরা অনেকটাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারছি। যে সবজি দিয়ে আমরা যারা থানায় থাকি তাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। থানায় আবাসিক কর্মকর্তাসহ সকল পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রতিদিন যে রান্না করা হয় সেই রান্নার সিংহভাগ সবজি এই বাগান থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
এতে করে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে অপরদিকে বাগানে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার না করায় ক্ষতির হাত থেকে পরিবেশসহ আমরা নিজেরাও রক্ষা পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, থানার পশ্চিম দিকে পরিত্যক্ত পড়ে থাকা জমির আগাছা ও জঙ্গল পরিস্কার করে মাটি দিয়ে ভরাট করে একটি বিভিন্ন ফলের বাগান তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বাগানটি তৈরি হলে বাগানে উৎপাদিত ফল দিয়ে থানায় কর্মরত সকল সদস্যরা বিষমুক্ত ফলের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
এছাড়াও থানা মূল ভবনের মাঝখানের পরিত্যক্ত জায়গাটিও পরিস্কার করে একটি বাগান তৈরি করেছি সেখানে বর্তমানে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, পাতাবাহারসহ বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ। প্রতিদিন সকালে চোখ মেললেই বাগানে ফুটে থাকা বিভিন্ন ফুল দেখলেই এক ভালোলাগার অনুপ্রেরণা হৃদয়ের মাঝে কাজ করে ফলে ভালো কাজ করার মধ্যদিয়ে সুন্দর একটি দিন কাটানোর আগ্রহের জন্ম নেয় মনে।
এছাড়া ওসি শুভরঞ্জন চাকমার নেতৃত্বে এবং কৃষি অফিসের সুপারভাইজার আরিফুর রহমান এর সহযোগিতায় ও বাবুল চন্দ্র দাসের তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়তই থানা প্রাঙ্গনে জন্ম নেয়া জঙ্গলগুলো পরিস্কার করার মধ্যদিয়ে পুরো থানা প্রাঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন একটি মনোরম, ছিমছাম ও সুন্দর একটি পরিবেশ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করা যায় পরবর্তিতে যারা এই থানায় আসবেন তারাও এই সৃজনশীল কাজগুলোর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন।