আহসান হাবিব,পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া বাংলাবান্ধায় মহানন্দা নদীতে পাথর তুলতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফরিদ (২৪) নামের এক পাথর শ্রমিক। বুধবার সকালে বাংলাবান্ধা ইউপির জায়গীরজোত সীমান্ত এলাকায় ৭৩১ মেইন পিলারের ৭ আর সাব পিলার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। আহত পাথর শ্রমিক ওই এলাকার তমিরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, সকালে সীমান্ত নদী মহানন্দায় পাথর তুলতে যান ফরিদ। মহানন্দায় পাথর উত্তোলনের সময় বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের জালাসী ক্যাম্পের বিএসএফ এক সদস্য বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে গুলি করে। গুলিটি ফরিদের ডান পায়ে লেগে বাঁ-পা দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে নদীর পানিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে
দ্রæত উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরী বিভাগ থেকে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে সেখান উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে এ ঘটনার পরপরই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহবান জানায়। দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে ৭৩২ মেইন পিলারের ১ এস সাব পিলার এলাকায় দু’দেশের ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বর্ডার গার্ড
বাংলাদেশের ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মাহফুজুল হক ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট এসএস শিরোহীসহ বিজিবি-বিএসএফের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকে ১৮ বিজিবির অধিনায়ক গুলি করার কারণ জানতে চাইলে বিএসএফ ১৭৬/কমান্ডার জানান, ফায়ারটি অনাকাংখিত হয়েছে। পরবর্তীতে এরকম অনাকাংখিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকবেন বলে জানান।
এ জন্য উক্ত ঘটনার তদন্ত স্বাপেক্ষে বিএসএফ সৈনিক অপরাধী হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। তবে বর্ডার গাইড লাইন মেনে চলতে হবে এবং ছোট ছোট সমস্যা কোম্পানী /পোস্ট কমান্ডাররা সমাধান করবেন।
বিকেলে জায়গীর জোত সীমান্তে মহানন্দা নদীতে বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন পাথর শ্রমিক জানান, ফরিদসহ আমরা কয়েকজন ১৫ দিন পরে মহানন্দা নদীতে পাথর তুলতে যাই। নদীতে পাথর তুলতে নেমে কাজ শুরু করতেই বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ করে দুই বিএসএফ। তারা ফরিদের হাটুতে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। পরে ফরিদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।
ফরিদের ফুফু রহিমা আক্তার (৪২) জানান, আমরা খুব গরীব মানুষ ভাই। নদীতে পাথর তুলে জীবিকা চলে আমাদের। আজ (বুধবার) আমার ভাতিজা ফরিদ পাথর তুলতে গিয়ে তার পায়ে বিএসেেফর গুলি লেগেছে। দুই পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। রংপুর হাসপাতালে ভর্তি আছে। জানিনা তার পরিবার কিভাবে চলবে। তার সংসার এখন কিভাবে চলবে।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মাহফুজুল হক বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি জিরোলাইনে বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় কোন বিএসএফ
সদস্য জড়িত আছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে তারা। সেই সাথে সীমান্তে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে তারা।