পটুয়াখালীতে স্লুইসগেট আটকিয়ে মাছ শিকার, লোনা পানিতে ১০ গ্রাম প্লাবিত
আনোয়ার হোসেন আনু, সত্যকন্ঠ; নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্দারমানিক নদীর সংযোগস্থল মিঠাগঞ্জ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের স্বনির্ভরখাল, সুইজগেট (জলকপাট) দখল করে সুইসগেট দিয়ে লবণ পানি ঢুকিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে প্রায় কয়েকশত একর জমিতে আউশ বীজতলা তৈরি ও আবাদে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। এ সুযোগে মাছ শিকার করতে মাসের শুরু থেকে ওই ইউনিয়নের কাংকুনীপাড়া, মধুখালী, আইমপাড়া এলাকার সুইসগেটি দখল করে বালীয়াতলী ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি সোহেল।সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার আন্দারমানিক নদীর সংযোগ মিঠাগঞ্জ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের ৮ কিলোমিটার প্রবাহমান স্বনির্ভরখাল (জিয়ার খাল)। চাষাবাদের জমিতে মিষ্টি পানির অভাব ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের খালে লবণ পানি প্রবেশ করিয়ে মাছ শিকার করছে। আউশের ধান চাষ নিয়েও রয়েছে ১০টি গ্রাম চরম অনিশ্চয়তা। লবন পানিতে মাঠ তলিয়ে যাওয়ার কারনে গবাদিপশুর চরম খাদ্য সংকট ও আউশের বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এমনকি এসব গ্রামের মানুষের রান্না, গোসলসহ রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হতে চলছে। বর্তমানে খালটিতে লোনা পানিতে থৈথৈ করছে। এখন কৃষকদের হাড়িপাতালে করে মিষ্টি পানি গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেতে হয় তাদের। এ দৃশ্য ক্ষতিগ্রস্থ ওই সব গ্রামগুলোর সর্বত্র এখন চোখে পড়বে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকদের স্বার্থে নিজ হাতে কেটে ছিলেন দশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য স্বনির্ভর খাল। এ খাল নদীর সাথে সংযোগ স্থলে রয়েছে একটি সুইসগেট। সেখান থেকে ইউনিয়নের সুইসগেট দিয়ে জিয়ারখাল নদীতে লবণ পানি প্রবেশ করানোর কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কানকুনিপাড়া ও মধুখালী, হারিপাড়া, বৌদ্ধপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী নেতা সোহেল সুইসগেট গেট নিয়ন্ত্রণ করেন।
বালীয়াতলী ইউনিয়নের শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহা-সভাপতি সোহেল জানান, আমার কাছে সুইসগেটের চাবি আছে। সুইসগেট দেখাশুনা করি আমি নিজেই। কিন্তু আমিতো লবন পানি উঠাই না। কৃষকের যাতে সুবিধা হয় তা আমি করি যাচ্ছে।
বালীয়াতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য এনামুল মিয়া বলেন, আমি নিজে কয়েকবার মোবাইল ফোন দিয়ে বলছি যে লবন পানি না উঠায় কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কথা শুনতেছে না।
মিঠাগজ্ঞ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য আবু হাশেম বলেন, আমার তিনকানির বেশি জমি রয়েছে এ বিলে। এখন আমি আউশের বীজ করছি। লবন পানি সব শেষ করে দিতে আছে। শ্রমিকলীগের সিনিয়ার সহা-সভাপতি সোহেল কারো কথা শুনতে আছে না। নিজেদের সুবিধামতো লবণ পানি ওঠায়-নামায়। ওই পানির লইগ্যা আমাগো আস (হাঁস)-মুরাও (মুরগি) মারতে আছে। আমি জনপ্রতিনিধি কৃষকের স্বার্থে কি করবো।
কাংকুনীপাড়া গ্রামের ড্রাগন চাষ করেন মোস্তফা জামান বলেন, আমার এক একর জমিতে ড্রাগন সহ সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলছি। কিন্তু নদীতে লবন পানি। চৈত্র মাস থেকে গাছে বেশি করে পানি দিতে হয়। কিন্তু মিঠা পানি দিতে পারি না। আমার বাগানের এক হাত দূরে রয়েছে লবন পানি। ড্রাগন গাছে পানি না দেয়ার কারনে ফল দেড়িতে আসছে। সরকার এভাবে ¯øুইসগেট গুলো এভাবে লোক দিয়ে নিয়šন¿ করলে কৃষকদের বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই।
বালিয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান এ বিএম হুমায়ুন কবির জানান, লোনা পানি ডুকানো কোনো নিয়ম নেই। স্বনির্ভর খালটি মিঠাগজ্ঞ ও বালীয়াতলী ইউনিয়নের ভঠার। দু’ইউনিয়নের জনগনের ক্ষতি সাধিত হয়। আমি এ মাত্র শুনলাম। কারা লবন পানি উঠায় তা জেনে ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানান, কৃষকের স্বার্থে কৃষি অফিস সব সহযোগিতা করবে। কিন্তু ¯øুইসগেট নিয়ন্ত্র করে পানি উন্নয়ন র্বোড। লবন পানি এখন উঠালে কৃষকের ক্ষতি হবে। সব জায়গায় বীজতলা তৈরি করার সময় এসেছে। কলাপাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষকেরা আমার কাছে এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। যাতে কৃষকের এমন ক্ষতি হয় তা আমি চাইনা।