ফিরোজ হোসেন বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত হিসেবে পরিচিত নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ইরি-বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশা কাবু করতে পারেনি তাদের। তবে চারা রোপন ব্যহত হচ্ছে খানিকটা। আবহাওয়া ভালো হওয়ার অপেক্ষা করছেন চাষিরা। এবছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে কিছুটা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এদিকে মাঘ মাসের শুরু থেকেই শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে কৃষকেরা ইরি-বোর ধান চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। বর্তমান আবহাওয়ার মতো চাষের সময়ে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ও বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকেরা।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কেউ তীব্র শীত উপেক্ষা করে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমা করছে। আবার কেউ কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল বয়ে জমি তৈরি করছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষকেরা তাদের তৈরিকৃত জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করছে। কোথাও গভীর অথবা অগভীর নলকূপ দিয়ে পুরোদমে চলছে জমিতে সেঁচ-কাজ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৮টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩শত হেক্টর জমিতে। চাষকৃত জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন চাল।
এবছর ধান রোপনের জন্য প্রায় ৭শত ৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। উফশী ধানের বীজতলা ৬২০ হেক্টর ও হাইব্রিড ধানের বীজতলা ১৫০ হেক্টর। বোরো ও উফশী বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও হাইব্রিড বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ২৯০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বোরোধান আবাদ করা হবে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে শতভাগ জমিতে ইরি-বোরো ধানের রোপন কাজ সম্পন্ন হবে।
এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে বোরো মৌসুম শুরুর আগেই রবি মৌসুমে ১ হাজার ৬৫০ জন চাষীকে সরিষা, ভুট্টা, মুগ, মশুর, খেসারিসহ বিভিন্ন শষ্যের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারের পুর্নবাসন বীজ সহায়তা ও প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩শ জন কৃষককে ২ কেজি করে হাইব্রিড ধানের বীজ ও ৫শ জনকে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এব্যপাারে উপজেলার আধাইপুর ইউপির ঠাকুর পাড়া গ্রামের কৃষক শ্রীঃ তাপস চন্দ্র মন্ডল বলেন, সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে হাইব্রিড ধানের বীজ ও সার সহায়তা পেয়ে ২বিঘা জমিতে আগাম চাষ শুরু করেছি। আগাম ধান রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ধানের রোগ বালাই কম থাকে। তাই আমি প্রতিবছর আগাম ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করে থাকি। আর অন্যান্য জাতের ধান আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে রোপনের চেষ্টা করবো।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার সহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হলে এ মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও সার্বক্ষণিক সুপরামর্শ দেওয়া হবে।