বিনা টিকিটে বাদশাহ্’র সার্কাস দেখে মুগ্ধ রামপালের হাজারো মানুষ
রামপাল (বাগেরহাট)প্রতিনিধিঃ মাথা মাটির নিচে ঢুকিয়ে, চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে এবং মুখে আগুন নিয়ে নানা ভঙ্গিতে শারীরিক খসরাত দেখাচ্ছেন এক ব্যক্তি। মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে হাজারো মানুষ।
বিনা টিকিটে গ্রাম-গঞ্জে এ সার্কাস দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন দেশের উত্তর অঞ্চলের নীলফামারী জেলার জলডাঙ্গা এলাকার মোঃ আলমগীর বাদশাহ্।
শনিবার (১৮ মে) বিকালে এমন অভিনব সার্কাস খেলা দেখা যায় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এ বি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে।
নীলফামারীর থেকে আলমগীর বাদশাহ্ নিজস্ব একটি ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইকে চড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে মাথায় ও বুকে ইট ভেঙ্গে, শরীরের উপর সাইকেল রেখে তার উপর সাতজন উঠিয়ে, মুখে আগুন জ্বালিয়ে, বুকে লোহার রড ঢুকিয়ে এবং চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে রাখে শিশু, কিশোর, নারী,পুরুষ, বৃদ্ধসহ এ সার্কাস প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেন এই বাদশাহ্।
তিনি বাগেরহাটে এসেছেন প্রায় মাস হতে চলেছে, থাকবেন পবিত্র ঈদুল আযহা পর্যন্ত। প্রতিদিন সার্কাস দেখিয়ে উপহার হিসেবে পান ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তার সার্কাস খেলা দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকে
খুশি হয়ে এ টাকা উপহার দেন নানান শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
বৃ-চাকশ্রী এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা হামিম ফকির বলেন, আমি এমন সার্কাস আগে কখনো দেখি নাই। পরিবারের সকলকে নিয়ে মাঠে দেখতে এসেছি। অনেক মানুষ আজ মাঠে উপস্থিত ছিলো, এমন সার্কাস যদি এলাকায় মাঝে মধ্যে হয়, তাহলে এলাকার সকলে এক সাথে থেকে এই সব আনন্দ উপভোগ করতে পারবো।
রামনগর এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা কাসেম শেখ বলেন, বহুদিন পর এই সার্কাস খেলা দেখলাম। এই খেলা খুব আনন্দ দায়ক খেলা, আমার খুব ভালো লেগেছে গ্রামগঞ্জে এখন খেলা খুব কম দেখা যায় । সার্কাস খেলা দেখে খুশি হয়ে আমিও সহযোগিতা করেছি।
একুব্বারিয়া এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আগে কখনো এই সার্কাস দেখি নাই। এলাকার সকল শ্রেণির মানুষের ভিড়ে মুখরিত ছিলো স্কুল মাঠ। মনে হচ্ছিল যে আজ ঈদের দিন। এমন খেলা মাঝে মধ্যে হলে আমাদের একতা থাকবে।
আলমগীর বাদশাহ্ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এ সার্কাস খেলা আমি দেখাচ্ছি। মাথায় ইট ভাঙতে পারি, বুকে ইট ভাঙতে পারি, শরীরের উপর সাইকেল রেখে তার উপর সাতজনকে উঠাইতে পারি, মুখে আগুন জ্বালাইতে পারি, চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে রাখতে পারি, এই খেলা গুলা কোন জাদু মন্ত্র নয়। এগুলো হচ্ছে সব অনুশীলন ও সাধন । বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এই খেলা শিখে এটাই সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা।
তিনি আরো বলেন, নীলফামারী আমার বাড়ি মা-বাবা স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমার পরিবার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ আমলে তৈরি দি লক্ষ্মন দাস রয়েল বেঙ্গল সার্কাস পার্টিতে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার পরে সার্কাস পার্টি বিলুপ্ত হয়। এরপর সংসারের অভাব অনটন দূর ও নিজেদের জীবিকার রাখার তাগিদে পারিবারিকভাবে এ ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে-গঞ্জে ছুটে চলি।
বিনা টিকিটে গ্রামে-গঞ্জে এ সার্কাস দেখিয়ে কারো থেকে টাকা পয়সা দাবি করে নেইনা।
খেলা দেখে খুশি হয়ে মানুষ যা দেন তা দিয়ে চলে আমার সংসার।
বাইনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির মোঃ আব্দুল্লাহ্ বলেন, আজ চাকশ্রী স্কুল মাঠে যে ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রদর্শন হয়েছে, এ খেলা দেখে হাজারো মানুষ খুশি হয়েছে এবং যার যতটুক সাধ্য আছে তাই দিয়ে তাকে সাহায্য করেছে। বহুদিন পর এ বাজারে সার্কাস খেলা দেখানো হলো।