সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলা জেলার সাত উপজেলার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর কলাগাছ, বাঁশের কঞ্চি ও সাদা কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ওই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন করে থাকে।
এতে করে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে না ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা। কয়েকদিন পর ২১শে ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের অভাবে
উপজেলায় পালন করে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ও দূরের অনেক প্রতিষ্ঠানে এই দিবস পালন করা হয় না। ১ হাজার ৫১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জানা গেছে, জেলার ৭ উপজেলায় মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৬১৭টি। এর মধ্যে কলেজ রয়েছে ৪৫টি,
মাধ্যমিক ও নিম্ম মাধ্যমিক ২৭১টি, মাদরাসা ২৫৪টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪৭টি। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় শহীদ মিনার রয়েছে ২০টি, দৌলতখানে ১২টি, বোরহানউদ্দিনে ১৪টি, তজুমদ্দিনে ৯টি, লালমোহনে ১৭টি, চরফ্যাশনে ২৪টি এবং মনপুরা উপজেলায় ৯টিসহ ছোট-বড় মিলে মোট ১০৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট ১ হাজার
৫১২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জানে না ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস কি? ভোলা সদর উপজেলার ২২ নম্বর টগবী চর ছিফলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে
শহীদ মিনার নেই। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম জানায়, ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন তারা বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্মূল কৃষ্ণ জানান, জায়গা না থাকায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার তৈরি করা যাচ্ছে না।
এ চিত্র শুধু টগবী চর ছিফলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়। জেলার ১ হাজার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরকে বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। আর যাদের নির্মাণের
সামর্থ্য নেই, তারা যেন আশেপাশে যেখানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা আছে সেখানে গিয়ে শহীদদের সম্মান জানায়। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়টি বলে রাখা হয়েছে। তবে পুরোনো প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের সরকারি কোনো তহবিল নেই।