মসজিদের টাকার হিসাব চাওয়ায় ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
যশোরের ঝিকরগাছায় মসজিদের টাকার হিসাব চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে স্কুল শিক্ষক হাসানুজ্জামান ও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল আউয়াল।
গত শুক্রবার (৩১ মে) জুমার নামাজের পর উপজেলার ৭নং নাভারণ ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর ডাঙ্গী গ্রামের মসজিদে এই ঘটনা ঘটে।
যে দুইজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ হয়েছে তাঁরা হলেন- ইসমাইল হোসেন ও আব্দুর রহমান বাবু।
ইসমাইল হোসেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার ঝিকরগাছা ও চ্যানেল এস টিভির বেনাপোল প্রতিনিধি এবং অপরজন আব্দুর রহমান বাবু হলেন বার্তাকণ্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। তাঁরা উভয়ই রঘুনাথপুর ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, শুক্রবার হাসানুজ্জামানসহ মুসুল্লিরা সভাপতি আব্দুল আউয়ালের কাছে গত কয়েক বছরের আয়-ব্যয় ও অনুদানের টাকার হিসাব দিতে বলেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ওই ওয়ার্ডের সাবেক এক মেম্বারের ইন্ধনে আব্দুল আউয়াল স্কুল শিক্ষক হাসানুজ্জামানের উপর চড়াও হন।
এসময় সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন ও আব্দুর রহমান বাবু ঠেকাতে গেলে আব্দুল আউয়াল তাদের উপর চড়াও হন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। ওইসময় তিনি বলেন তোদের কাছে টাকার হিসাব দিতে পারবো না এই কথা বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আব্দুল আউয়াল।
পরেরদিন হঠাৎ দুপুরে দিকে থানার পুলিশ সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন ও আব্দুর রহমান বাবুর বাড়িতে আসে। তখন তারা জানতে পারেন আব্দুল আউয়াল উল্টো তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগেরদিন শুক্রবার সন্ধ্যার পর ঝিকরগাছা থানায় এই মিথ্যা অভিযোগটি করেন আব্দুল আউয়াল। অভিযোগ করার পর ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে গ্রামের এক চায়ের দোকানে লোকজন জড়ো করে বসে ছিলেন আব্দুল আউয়ালের বড় ছেলে ও ছোট ছেলে।
তারা দুজন চিৎকার করে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন যত টাকা লাগুক স্কুল শিক্ষক হাসানুজ্জামান ও সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙ্গে দেবেন।এ ঘটনায় ঝিকরগাছার কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক মুরুব্বি বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল আউয়াল একজন বদরাগী মানুষ। কথায় কথায় মসজিদের ভিতরে মুসুল্লিদের উপর চড়াও হন, এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া আব্দুল আউয়ালের তিনটা ছেলে, তিনটাই সন্ত্রাসী প্রকৃতির। তিন ছেলেরা হলেন, মোজাম্মেল (মোজাম), হারুন ও গিয়াসউদ্দিন। এরমধ্যে হারুন বিদেশে থাকেন।
তিনি বলেন, আব্দুল অউয়ালের বড় ছেলে মোজাম বেশ কিছুদিন আগে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নাভারণ সাতক্ষীরা মোড়ে লোকজনের সামনে পায়ের জুতা দিয়ে তার আপন চাচা চাঁদ মিয়াকে মারধর করে। মোজাম সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় ওই সময় চাচা চাঁদ মিয়া প্রাণের ভয়ে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে সাহস পাননি।
গত দুইমাস আগে আউয়ালের ছোট ছেলে গিয়াসউদ্দিন জমিতে ঘাস রাখাকে কেন্দ্র করে তার আরেক আপন চাচা ফরজন আলীকে গ্রামের এক চায়ের দোকানের সামনে অতর্কিত হামলা চালায়।
এসময় গিয়াসউদ্দিন দৌড়ে এসে তার চাচাকে উল্টো-পাল্টা কিল ঘুষি ও বুকে লাথি মারে। এতে চাচা ফরজন আলী গুরুতর আহত হন। পরে ফরজন আলী ভাইপো গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিলে।
শেষ পর্যন্ত সাহস পায়নি। আউয়াল ও তার দুই ছেলের কারণে পুরো ডাঙ্গী গ্রামজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কিছুদিন আগে আব্দুল আউয়ালের মেজো ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী হারুন তার আপন বোনের দুই ছেলেকে মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সে তার বোনকে হুমকি দিয়ে বলেন ১০ লাখ টাকা খরচ হলেও তার দুই ছেলেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবেন।
এর কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে হারুনের মেয়ের সাথে তার বোনের ছোট ছেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা দু’জন কাউকে না জানিয়ে চুরি করে বিয়ে করে ফেলেন। পরে বিয়ের কথা জানাজানি হলে হারুনের বাবা আব্দুল আউয়াল অতিগোপনে তার নাতনিকে যশোর কোর্টে নিয়ে তালাক দিয়ে আসেন।
তালাকের ঘটনা মেনে নিতে পারেননি আউয়ালের মেয়ে। তারপর আউয়াল তার প্রবাসী ছেলেকে দিয়ে ফোনের মাধ্যমে আপন মেয়েকে ভয়ভীতি ও মামলার হুমকি দেন। কথায় কথায় মানুষকে হুমকি-ধামকি থানায় অভিযোগ দেওয়া যেনো আব্দুল আউয়ালের একটা পেশা হয়ে গেছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল আউয়াল বলেন, তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।
দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঝিকরগাছা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন চাদঁসহ ঝিকরগাছার কর্মরত সকল সাংবাদিকবৃন্দ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, এ বিষয়ে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। গতকাল রবিবার সন্ধ্যার পর উভয় পক্ষকে থানায় এসে মিটমাট করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তরা থানায় হাজির হলেও অভিযোগকারী থানায় হাজির হননি।