মানবপাচার মোকাবিলায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ: ডিজিটাল ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম (এনআরএম)-এর উদ্বোধন
বিলাল হুসাইন:ঢাকা (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) : মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সহায়তার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিজিটাল ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম (এনআরএম) প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
ডিজিটাল এনআরএম একটি ওয়েব-ভিত্তিক সফটওয়্যার, যা পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে তাদের সময়মতো ও সমন্বিত সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে একটি একক ডিজিটাল কাঠামোর আওতায় আনবে। এই উদ্যোগটি মানবপাচারবিরোধী জাতীয় কর্মকাণ্ডে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) তাঁর বক্তব্যে এই জঘন্য অপরাধ দমনে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “ আমাদের সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রে থাকতে হবে ভুক্তভোগীরা—যারা প্রায়শই সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অংশ। তাদের যত্ন, সুরক্ষা, এবং পুনঃএকত্রিকরণ অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার মতোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল এনআরএম এই চ্যালেঞ্জগুলোর প্রেক্ষিতেই তৈরি হয়েছে এবং এটি ভুক্তভোগীদের আরও কার্যকরভাবে শনাক্তকরণ, অনুমোদিত সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, সেবার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, তদারকি এবং মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেফারেলে গতি ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।”
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তা এবং যুক্তরাজ্যের মডার্ন স্লেভারি ইনোভেশন ফান্ড (এমএসআইএফ), হোম অফিসের সমর্থনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করে। মানবপাচারপ্রবণ চারটি জেলায় সফলতার সাথে পাইলটিং করার পর এটি এখন জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। এই প্ল্যাটফর্মটি দীর্ঘমেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিজিটাল এনআরএম-এর পাশাপাশি সরকার মানব চোরাচালান প্রতিরোধে আইন পর্যালোচনা, ২০২৬— ২০৩০ সাল পর্যন্ত মানবপাচারবিরোধী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সিআইডিতে বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট গঠন এবং ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ নির্দেশিকা বাধ্যতামূলক করার মতো বিস্তৃত সংস্কারমূলক কার্যক্রমও এগিয়ে নিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সকল অংশীদারদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আইন প্রয়োগকারী ও সেবা প্রদানকারী সংস্থা, সরকারি দপ্তর, আন্তর্জাতিক ও সুশীল সমাজের অংশীদাররা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে যাতে এই সিস্টেম তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও মিশনের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিবৃন্দ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধাণগণ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।