সাদিকুল ইসলাম সাদিক,নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
হাতাহাতি করে উল্টো মিথ্যে অভিযোগে যাত্রীকে আটক করে পুলিশে দিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে বিমানবন্দর ম্যানেজার সহ নভোএয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ার প্রতিবাদ করায় একজন চিকিৎসকসহ দুই যাত্রীর সাথে এই অন্যায় করা হয়েছে। এতে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর সম্পর্কে বিরুপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এই ঘটনা ঘটে। খারাপ আচরণের শিকার দুই যাত্রী হলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন সরকার ও রংপুরের চিকিৎসক শরীফুল ইসলাম। বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয়। পরে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় নতুন করে টিকিট দিয়ে তাদের ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয় বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ার।
জানা যায়, ১১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় নভোএয়ার ফ্লাইটে ঢাকার টিকেট ক্রয় করেন ওই চিকিৎসক। তিনি যথা নিয়মে আসেন বিমানবন্দরে। সাড়ে ৯ টা সময় পার হয়ে যায়। ফ্লাইটের কোন খবর নেই। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নভোএয়ার সৈয়দপুর ম্যানেজার নাদিম খান বাপ্পির সাথে। তিনি জানান সাড়ে ১০ টায় বিমান আসবে। কিন্তু সে সময়ও পেরিয়ে যায়। পরে আবার বলেন সাড়ে ১২ টা। ওই সময়ও বন্দরে বিমান আসেনি।
এরপর ওই চিকিৎসক যাত্রী উত্তেজিত হয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নভোএয়ার ম্যানেজার বাপ্পি। যাত্রীর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয় এবং যাত্রীকে নভোএয়ারের ডেক্সে ছুড়ে ফেলেন।
যাত্রীর সাথে কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে এসে কথা বলেন জসিম উদ্দিন সরকার জুয়েল নামে আরেক যাত্রী। তাকেও করা হয় লাঞ্ছিত। এ বিষয়টি দেখে অন্যান্য যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ যাত্রীরা ক্ষুব্ধ।
জসিম উদ্দিন সরকার জুয়েল বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী মানুষ। জরুরি মিটিং থাকায় ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ফ্লাইট বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট ম্যানেজার আমাদের মারতে আসেন। নভোএয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার সাথে যোগ দিয়ে হেনস্তা করেছেন। আমাকে প্রায় ৪ ঘন্টা থেকে তারা আটকে রেখেছে।
কথা কাটাকটির মাঝে তারা নিজেরাই হাতিহাতি শুরু করে। এতে এক পর্যায়ে নভোএয়ারের ডেস্কে রাখা কিছু জিনিসপত্র পড়ে ভেঙ্গে যায়।
আর এর দায় আমাদের উপর চাপিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ ফ্লাইটের বাকি ৬২ যাত্রীকে দুপুর ১২টার ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরে ভাঙ্চুরের মিথ্যে অভিযোগে পুলিশে দেয়ারও চেষ্টা করে। যা খুবই দু:খজনক ও অপমানকর।
বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি আমিনুল ইসলাম ও সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম। বিকেল ৪ টা ঘটনা স্থলে আসেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দপুর সার্কেল সারোয়ার আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান। তাঁদের প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান হয়। পরে দুই যাত্রীকে দেয়া হয় টিকেট।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার সুপ্লব ঘোষ বলেন, কুয়াশার কারনে নভোএয়ারের সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দেরিতে রওনা দেয়। ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ায় দুই যাত্রী কর্তৃপক্ষের সাথে বাক বিতাণ্ডায় জড়ায়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা নভোএয়ারের ডেস্কে ধাক্কা দিলে ডেস্কে থাকা জিনিসপত্র ভেঙ্গে যায়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের হেফাজতে নেন।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিমানবন্দরে এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করেন। তবে পরে আলোচনায় দুইপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও জমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে। তবুও এ বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বিমান চলাচল করছে। এক কথায় লাভজনক বিমানবন্দরে পরিনত হয়েছে এটি। কিন্তু নভোএয়ারের ম্যানেজার ও যাত্রীর মধ্যে যে ঘটনা ঘটলো এতে করে সুনাম ক্ষুন্ন হল সৈয়দপুর বিমানবন্দরের।