সাদিকুল ইসলাম সাদিক,নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে চার শিক্ষিত যুবকের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ তথা বন্ধুমাছি চাষ প্রকল্প। শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে সৃষ্ট এই উদ্যোগ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সেখান থেকে উৎপাদিত লার্ভায় তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ ও হাঁস-মুরগীর প্রাকৃতিক খাবার। ফলে এই মাছির খামারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য সংকট দূর করবে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভূমিকা রাখার আশা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষিত চার যুবক মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. সাদেকুজ্জামান লাবু, মো. রেজাউল করিম রাজু ও মো. মাহাফুজার রহমান পেশায় শিক্ষক। অবসরে গল্প আড্ডায় সময় কাটতো তাদের। শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
সেই পরিকল্পনা থেকে চারবন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ছোট একটি গরু-ছাগলের খামার। কিন্তু এ আর নতুন কি? এমন ভাবনার মধ্যেই বন্ধু সিরাজুল ইসলাম অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারেন ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা দিয়ে পাখি, হাঁস, মুরগি ও মাছের অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার তৈরির প্রক্রিয়া। তিনি বন্ধুদের সাথে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপরই শুরু হয় লার্ভা উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদভাবে জানা। অবশেষে সিরাজুল ইসলাম খোঁজ পায় সৈয়দপুরের গোলাহাটে মোখলেছুর রহমান নামে একজন এ মাছির চাষ শুরু করেছেন। পরে সেখানে গিয়ে হাতে-কলমে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তারা।
হাতেকলমে প্রশিক্ষণ শেষে সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশাল পাড়া গ্রামে চৌহমুনী মন্দিরের কাছে গড়ে তোলেন তাদের নিজস্ব খামার। শুরু হয় ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা চাষ। এখন পুরোদমে চলছে কার্যক্রম। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের সাথে।
তাঁরা জানান, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই পরিবেশের জন্য বন্ধুমাছি হিসাবে পরিচিত। গৃহস্থালি বর্জ্যই এদের প্রধান খাবার। ফলে স্বল্প খরচে এ মাছি দিয়ে পোল্ট্রি খাবার উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পোল্ট্রি খাবারের দাম। ফলে হাঁস, মুরগী ও মাছ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
তাঁরা আরও জানায়, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ করে পোল্ট্রি খামারিরা তাদের খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারেন। এ মাছি দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি খাবার অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ। এ খাবারে পশুপাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনি শারীরিক বৃদ্ধিও হবে দ্রুত।
উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা ট্রায়াল চাষে সফল হয়েছি। এরইমধ্যে একটি ফিড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আমাদের উৎপাদিত লার্ভা তারা মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করছে। এই চাষের পরিধি বাড়াতে পারলে যেমন মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তেমনি আমাদের আয়ের নতুন একটি পথও সৃষ্টি হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার রায় বলেন, দেশের কয়েকটি স্থানে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষাবাদ শুরু হলেও এ অঞ্চলে এটি নতুন উদ্যোগ। লাভবান হলে বেকার যুবকদের কর্মস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। যা খুবই আশা জাগানিয়া বিষয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই খামার থেকে সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি এখান থেকে বেরিয়ে আসছে জৈব সার। পোল্ট্রি, মৎস্য চাষ ও বিভিন্ন ফসল আবাদে যা ভূমিকা রাখবে।