তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়া এই ঘুগনি বিক্রেতাকে নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন ৫ জন গবেষক
সত্যকন্ঠ; সাহিত্য ডেক্স:
ছোটবেলায় অকালে বাবাকে হারিয়ে ছেদ পড়েছিল শিক্ষায়। যে স্কুলে পড়তেন সেখানেই করতেন রান্নার কাজ, পরবর্তীকালে খোলেন ঘুগনির দোকান। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে তার পরিচয়, তিনি পদ্মশ্রী পদক প্রাপ্ত জনপ্রিয় কবি হলধর নাগ। হলধর নাগ (Haladar Nag) এর জীবন কাহিনি আপনাকে অনুপ্রাণিত করবেই।
পড়নে সাদা ধুতি ও কুর্তা। পিঠ পর্যন্ত লম্বা তেল জবজবে চুল। পায়ে নেই জুতোও। এমন চেহারার ঘুগনি বিক্রেতা স্বাভাবিকভাবেই কারো নজর কাড়ে না৷ কিন্তু অনেকেই জানেন না অত্যন্ত অনাড়ম্বর পরিবেশে জীবন কাটানো এই মানুষটি একজন জনপ্রিয় কবি৷ তার ঝুলিতে রয়েছে পদ্মশ্রী সম্মানও।
হলধর নাগের গোটা জীবনটাই গড়িয়েছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ১০ বছর বয়সে বাবা মারা যান, হলধর তখন তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা শিকেয় ওঠে, মিষ্টির দোকানে বাসন ধোয়া থেকে রাস্তায় ঘুগনি বিক্রি – জীবনে অনেক কাজই করতে হয়েছে হলধরকে। কিন্তু তার প্রতিভা কখনোই জীবনের কাছে হার মানে নি। যতবারই তিনি কলম ধরেছেন, তার হাত থেকে ঝরে পড়েছে সাহিত্যের মণিমুক্তা।
ছোটবেলা থেকেই তিনি কোসলি ভাষায় ছোটগল্প লেখা শুরু করেন। কবিতা চর্চা শুরু করেন একটু বড় হয়ে। ১৯৯০ সালে প্রথম কবিতা ‘ধোদো বরগাছ’ অর্থাৎ ‘বুড়ো বটগাছ’ স্থানীয় এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ তারপর তিনি আরও চারটি কবিতা পাঠান ঐ পত্রিকায়। সেগুলোও প্রকাশিত হয় একে একে।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি হলধরকে। একের পর এক লেখা প্রশংসা কুড়োয় সাধারণ মানুষ থেকে সাহিত্য সমালোচকদের। তাঁর সমস্ত কবিতা একত্রিত করে ‘হলধর গ্রন্থাবলী’ প্রকাশ করেছে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়। চলছে এই বই এর দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতিও। এই মুহুর্তে তার লেখা নিয়ে গবেষণা করছেন ৫ জন গবেষক।
২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় দেয় সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন। তবু এখনও আগের মতই অনাড়ম্বর জীবনযাপনেই অভ্যস্ত ‘লোক কবি রত্ন’ হলধর নাগ।
সূত্র: বাংলা হান্ট