আগামী পহেলা বৈশাখে স্থানীয় নামসহ নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে–পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
আলী আহসান রবি
ঢাকা ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ খ্রি.
পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেছেন, আগামী পহেলা বৈশাখে স্থানীয় নামসহ নদ-নদীর একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন আমরা বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ১১০০ এর কিছু বেশি নদ-নদীর খসড়া তালিকা পেয়েছি। আরো যাচাই-বাছাই এর কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন আমরা ৬৪ জেলায় খাল, নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেবো যাতে কেউ আগামীতে খাল, নদ-নদী আর দখল করতে না পারে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আজ ঢাকায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) কর্তৃক আয়োজিত এক বিশেষ সম্মেলনে ‘নদ-নদী ও পানির ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে প্রধান অতিথি বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যশোরের ভবদহের সমস্যাটা খুবই জটিল হয়ে গেছে, এতটা বছর এটা কোনোভাবেই এড্রেস করা হয়নি। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল ৮ টা হতে রাত ৮টা /৯টা পর্যন্ত পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরাতে। ভবদহ এলাকায় স্লুইসগেটের ভিতরে উচ্চতা নিচু আবার স্লুইসগেটের বাইরে নদী ভরাট হয়ে গেছে অর্থাৎ উঁচু হয়ে গেছে। আর যার ফলে স্লুইসগেট খুলে দেয়া হলে পানি বের না হয়ে উল্টো ভিতরে ঢুকে পড়ে।তিনি বলেন, ভবদহ এলাকার সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদেরকে আমডাঙ্গা খাল আরো গভীর ও প্রশস্ত করে খনন করতে হবে। সেখানে পুনর্বাসনের বিষয়ে আছে। কিছু মানুষকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। এগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। টিআরএম এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন একদল তেড়ে আসে তারা বলে টিআরএম করা যাবেনা। উপদেষ্টা বলেন, ভবদহের এবারের সমস্যা আমরা আশা করি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৮০ ভাগ জায়গা থেকে আমরা পানি অপসারণ করতে সক্ষম হবো এবং এ ৮০ ভাগ জায়গায় মানুষ চাষাবাদ করতে পারবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ঢাকার চার পাশের চারটি নদী এবং দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে নদী দখলও দূষণমুক্তকরণের কর্মপরিকল্পনা আমরা চূড়ান্তকরনের দিকে যাচ্ছি।
উপদেষ্টা বলেন, করোতোয়া নদী নিয়ে আপনারা জানলে খুশি হবেন যে প্রভাবশালী দখলদার যিনি, তিনি নিজে এখন রাজি হয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে মিলে তিনি তার দখল সেখান থেকে তুলে নিবেন। এ কাজটা আমরা সহসাই করে ফেলতে পারবো। সম্মেলনে উপস্থিত একজন বক্তার প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা আরও বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি এপ্রিলে শেষ হবে। দুইটা সিজন লাগবে এই বিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করতে। একটা হচ্ছে বৃষ্টির সিজন, আরেকটা হচ্ছে শীতের সিজন। বৃষ্টির সিজনের স্টাডি হয়েছে এখন শীতের সিজনের স্টাডি শেষে অর্থের সংস্থান করে আশা করি আমরা এ কাজের উদ্বোধন করতে পারবো। আগের জায়গায় এই রেগুলেটরটি এখন আর নির্মাণ করা যাবেনা। রেগুলেটর ভেঙ্গে গেলে অন্য জায়গায় নির্মাণ করতে হয়, নতুন জায়গাও সিলেক্ট করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, নোয়াখালীতে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙ্গে যাওয়াতে ওখানে রাতারাতি চর জেগে উঠে। যার ফলে মানুষের বাড়ি-ঘর ভাঙ্গন হচ্ছিল, নদী ভাঙ্গন হচ্ছিল। ১৫ দিনের মধ্যে ওখানে ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করে দেয়ার ফলে ওই এলাকায় মানুষের বাড়িঘর গুলো নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা পেয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন,নোয়াখালীতে বন্যার দেড় মাস পরে যখন আমি গেলাম দেখলাম পুরো নোয়াখালী এলাকা, শহরটা, পানির নিচে প্রত্যেকটা এলাকায়, জায়গায় জায়গায়, জমিতে জমিতে পানি জমা। কি ব্যাপার বললাম? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চতা বাড়তেছে। জোয়ার ভাটার প্রভাবে পানি নামতেছে না। এখন নোয়াখালীতে ১০০ টার উপরে খালের নাম আমরা জোগাড় করেছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদেরকে একটা গ্র্যান্ট দিয়েছে। সেই গ্র্যান্টে নোয়াখালীর খাল গুলো আমরা খনন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু খাল খননের সাথে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের ব্যাপার আছে। উচ্ছেদ করলে কাউকে কাউকে আবার পুনর্বাসনের ব্যাপার আছে। সেজন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এই বরাদ্দটা আমরা খাল পুনরুদ্ধারের কাজে ব্যবহার করতে পারি কিনা তা আমরা আগামী অর্থ বছরের প্রাধিকারের মধ্যে রেখেছি।
উপদেষ্টা বলেন, নোয়াখালীর মানুষকে সর্বোপরি বাংলাদেশের সকল এলাকার মানুষকে নিজ নিজ এলাকার জলাশয় দখলের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার থাকতে হবে। তিনি বলেন এই যে দখল হয়ে যায় এই দখল উচ্ছেদ কিন্তু ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আবার এগুলোকে খনন করা আরও অনেক ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। কাজেই দখল যেন হতে না পারে এজন্য সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশের ১১টি জোনাল অফিসের প্রত্যেকটা জোনাল অফিসে গনশুনানি করে অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করবে। আপনারা যারা আছেন গনশুনানিতে অংশগ্রহণ করে অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সহযোগিতা করবেন।
নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর বৈশ্বিক সমন্বকারী এবং বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সারাদেশে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।