ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর প্রস্তাব, বিদ্যালয়ে তালা ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী
মাটি মামুন রংপুর।
রংপুরের বদরগঞ্জে চম্পাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। এ কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একের পর এক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে ২০১১ সালে তাকে প্রথমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর আরও কয়েকবার তিনি নারী কেলেঙ্কারির কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে তিনি বার বার চাকরিতে পুনর্বহাল হন।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক তার প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে আপত্তিকর কথা বলেন। ৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ফোনালাপে তিনি ওই ছাত্রীকে বলেন, ‘তুমি কি একাই আছো। আমি তোমাকে খুব লাইক করি। আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমার সবকিছু দেখব। তুমি জামা-কাপড় নেবে না। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তুমি জামাকাপড় কিনিও।
এরপর তিনি বলেন, ‘আগামীকাল তোমার পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০ টায়। তুমি সকাল ৯টায় সরাসরি আমার অফিসে আসিও। এসব কথা আবার কাউকে বলিওনা।
গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে প্রধান শিক্ষকের ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার কয়েক শ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুরুষদের হাতে কিছু দেখা না গেলেও প্রত্যেক নারীর হাতে ঝাড়ু ছিল। তারা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবির পাশাপাশি বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যলেয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য তাপস চন্দ্র রায় বলেন, প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের অসামাজিক আচরণ ও কার্যকলাপে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ উঠেছিল। আমরা চাই ওই শিক্ষককে অপসারণ করা হোক। নইলে একের পর এক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
চম্পাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, বারবার এসব ঘটনার কারণে স্কুলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরের বার আমরা ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতে পারব কিনা সন্দেহ। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলে কেউই তাদের ছেলে-মেয়েদের এই বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইবেন না।
এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) কাশপিয়া তাশরিন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম ও বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান। এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়ে হ্যান্ড মাইকে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত হয়ে বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে সায় দেননি কেউই।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়কে রক্ষার জন্য ওই প্রধান শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা হচ্ছে তা সবই ষড়যন্ত্রমূলক। আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে গরিব মেধাবী অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করতে পারি। অথচ আমাকে হেনস্থা করার জন্যই এটি করা হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি তার কিনা এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে কল কেটে দেন।