ছাত্র ইউনিয়নের তিন সাবেক নেতাকে শরীয়তপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণা
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
ছাত্র ইউনিয়নের তিন সাবেক নেতাকে শরীয়তপুর শহর কমিটির সকল কার্যক্রমে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মুক্তিভবনে মধ্য রাতে হামলার ঘটনায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তারা। তবে অবাঞ্ছিত করার বিষয়ে একমত নয় জেলা ছাত্র ইউনিয়ন। অবাঞ্চিত নেতারা হলেন রফিকুজ্জামান লায়েক, জলি তালুকদার, মঞ্জুর মঈন।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত পৌনে নয়টায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শরীয়তপুর শহর কমিটির ফেসবুক পেইজে একটি বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য পাওয়া যায়। শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুন্নী আক্তার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় বিকাল চারটায় শহর কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪১ তম ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সম্মেলন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৯ মার্চ দিবাগত রাত ২ টা থেকে ২.৩০ মিনিটের সময় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সারাদেশ থেকে আগত ঘুমন্ত কাউন্সিলরদের উপর অতর্কিত হামলা করে সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রফিকুজ্জামান লায়েক, জলি তালুকদার ও মঞ্জুর মঈনসহ একাধিক সাবেক ছাত্রনেতারা।
এতে কাউন্সিলররা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়ে ভীত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হামলায় কাউন্সিলরদের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন সাবেক নেতারা। মোবাইল ভেঙে ফেলায় সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মীরা পরিবার ও জেলার নেতাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সভা থেকে ছাত্র ইউনিয়নের শরীয়তপুর শহর কমিটির সকল কার্যক্রমে হামলাকারীদেরকে অবাঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় তাদের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশও করা হয়েছে।
রফিকুজ্জামান লায়েক, জলি তালুকদার ও মঞ্জুর মঈন বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। রফিকুজ্জমান লায়েক ফরিদপুর জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি, জলি তালুকদার সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক ।
শহর কমিটির সভাপতি তপন বাড়ৈ বলেন, রাত গভীর হওয়ায় ১৯ তারিখ কাউন্সিল মুলতবি করা হয়েছিল। সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের বাসস্থান দিয়েছিল মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনসহ মুক্তি ভবনের কয়েকটি রুমে। রাত তখন প্রায় আড়াইটা। কাউন্সিলরগণ ঘুমিয়ে ছিল।
হঠাৎ রফিকুজ্জামান লায়েক, জলি তালুকদার ও মঞ্জুর মঈনের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন লোক এসে ঘুমন্ত কাউন্সিলরদের উপর হামলা করে আমাদেরকে বলেন এখনই কাউন্সিল শুরু হবে। আপনাদেরকে ঘুমোতে দেব না। এখান থেকে বের হয়ে এখনই কাউন্সিল করতে হবে। কিন্তু আমরা ছাত্র ইউনিয়ন করি।
ছাত্র ইউনিয়ন স্বাধীন সংগঠন। সাবেক কোনো নেতা কাউন্সিল করার জন্য আমাদেরকে মারধর করতে পারেন না। তাছাড়া তারা যখন আমাদেরকে মারধর করেছিল তখন কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির কেউ ছিল না। কাউন্সিল শুরু হবে নাকি মুলতবি থাকবে তা বলার অধিকার শুধু মাত্র কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির রয়েছে। সাবেক নেতারা অন্যায় ভাবে এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটানোয় তাদেরকে আমরা অবাঞ্চিত করেছি।
শরীয়তপুর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাইফ রুদাদ বলেন, প্রাক্তন নেতাদের বর্তমান নেতা-কর্মীরা সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। এটাই রাজনীতির চিরন্তন সত্য কথা। শরীয়তপুর শহর ছাত্র ইউনিয়ন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সাথে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন একমত নয়। ছাত্র ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ইউনিটে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের গঠনতান্ত্রিক স্বাধীনতা রয়েছে।
শরীয়তপুর শহর কমিটি স্বাধীন ইউনিট। তবে গঠনতান্ত্রিক ভাবেই তারা আবার জেলা কমিটির অধিনস্ত। আমি গাড়িতে, ঢাকা থেকে ফিরছি। শিগগিরই জেলা মিটিং ডেকে বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলা হবে। এই মুহুর্তে শহর কমিটির নেতাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, প্রাক্তন সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা করা উচিত তাদের।
তবে শহর কমিটির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও জেলা সভাপতি সাইফ রুদাদ ঢাকার মুক্তিভবনে মধ্য রাতের হামলার ঘটনাটি সত্য বলে স্বীকার করেছেন।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও বর্তমানে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক বলেন, ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদেরকে অবাঞ্ছিত করেছে তারা।
অবাঞ্চিত করার বিষয়ে জলি তালুকদার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। হামলার সময় আমি ছিলাম না। তিনি অন্যান্য নেতাদের সাথে কথা বলতে বলেন প্রতিবেদককে।