টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি
বিলাল হুসাইন,চিফ রিপোর্টার:ঢাকা নভেম্বর ১০, ২০২৫
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর দেশের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি জলাভূমি এবং অন্যতম সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বর্জ্য নি:সরণসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় ‘‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’’ জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ এর ধারা ২২ ও ২৭ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জারতক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি করা হলো।
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর জন্য প্রতিপালনীয় নির্দেশনাসমূহ:
ক. হাওর অঞ্চলে পাখি/পরিযায়ী পাখি শিকার, পরিযায়ী পাখি সমৃদ্ধ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে হাাঁস পালন, গাছ কাটা এবং হাওরের জলজ বনের কোনোরূপ ক্ষতিসাধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ;
খ. হাওরের জলজ গাছর (হিজল,করচ ইত্যাদি) ডাল কেটে ঘের নির্মাণ বা মাছের আশ্রয়ের কাঁটা হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ;
গ. পর্যটক/হাউসবোট অভয়াশ্রম বা সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষত এলাকাসহ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা হাওর অধিদপ্তর কর্তৃক চিহ্নিত হাওরের সংবেদনশীল এলাকায় (যেমন পাখি বা মাছসহ জলজ প্রাণীর আবাসস্থল , প্রজনন কেন্দ্র বা বন্য প্রাণীর চলাচলের স্থান) প্রবেশ করতে পারবে না;
ঘ. সরকারের অনুমতি ব্যতীত বর্ণিত হাওর এবং এর ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন কর যাবে না;
ঙ. পরিবশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরূপন সাপেক্ষে সরকারের অনুমতি ব্যতীত হাওরের জলস্রোতের স্বাভবিক প্রবাহ বিঘ্নিত করা যাবে না;
চ. হাওর এলাকায় ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/পরিবর্তন করতে পারে এমন কাজ করা যাবে না;
ছ. শিক্ষা সফর ও বিদেশী পর্যটক পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে;
জ. অনুমোদনের শর্ত অনযায়ী যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত্র থাকবে। কোনো হাউসবোট/নৌযান যাত্রী সংখ্যার অধিক যাত্রী পরিবহন্ ও মাছ ধরার যন্ত্র/ইক্যুইপমেন্ট বহন করতে পারবে না। নির্ধারিত রুট ছাড়া নৌযান চলাচল ও নোঙ্গর করতে পারবে না;
ঝ. দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। আকস্মিক ঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাতের আশংকালীন পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
ঞ. ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকগণকে স্থানীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে;
ট. . হাউসবোটে/নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও কোনো পার্টি আয়োজন করা যাবে না;
ঠ. হাউসবোট/নৌযানের মালিক ও ট্যুর অপারেটরগণ তাদের পরিচালিত ট্যুরে শন্দ দূষণকরী অর্থাৎ উচ্চ আওয়াজ সৃস্টিকারী ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহারকে নিশ্চিতভাবে পরিহার করবে;
ড. . . হাউসবোটে/নৌযানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন করতে পারবে না;
ঢ়. নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে হাওরে মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ;
ণ. যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমতি ব্যতীত হাওরে বালু, পাথর বা মাটি ইজারা প্রদান ও উত্তোলন নিষিদ্ধ;
ত. শুষ্ক মৌসুমে হাওরের কোনো জলাধারের পানি সম্পূর্ণভাবে নি:শেষ করা যাবে না;
থ. ট্যুর অপারেটরগণ ১০০ ফিুট দৈর্ঘ্যের অধিক নৌযান/হাউসবোট পরিচালনা করতে পারবে না;
দ. হাওর এলাকা সংশ্লিষ্ট বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তরল ও কঠিন বর্জ্য হাওরে নির্গমন করা যাবে না; এবং
ধ. হাওর অঞ্চলে পাকা সড়ক নির্মাণ পরিহার করতে হবে। তবে, জরুরি বা বিশেষ প্রয়োজনবোধে সড়ক নির্মাণের প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে এবং সরকার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এরূপ নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন সম্পাদন করতে হবে;
উপরিউক্ত সুরক্ষা আদেশ প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক; সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।







