সোনালী স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভোলায় আমন ধানের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলায় বর্তমানে আমন ধানের মৌসুম চলছে। গ্রামগঞ্জের মাঠজুড়ে যতদূর দৃস্টি যায় কেবল সবুজের সমারোহ।কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন এই সুজকে ঘিরেই তিলে তিলে গড়ে উঠছে। প্রতিদিন নিজ ফসলের পরিচর্যা করছেন তারা। ধানগাছের সার-ঔষধ প্রয়োগ করা, আগাছা বাছা, নিরানী দেয়া ইত্যাদি কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ বছর ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় আমনের মোট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে।
বিপরীতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৮০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর ও স্থানীয় জাত রয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০। নির্ধারিত জমি থেকে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৭ মে. টন চাল উৎপাদনের টার্গেট নেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভবাবনা রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার ৭ উপজেলায় মোট আমন আবাদের মধ্যে সদরে ২৫ হাজার ৫৪০ হেক্টর, দৌলতখানে ১৬ হাজার ৫৪০, বোরহানউদ্দিনে ১৮ হাজার ৫০০, লালমোহনে ২৩ হাজার ৫০০, তজুমোদ্দিনে ১২ হাজার ৬০০, চরফ্যাশনে ৭০ হাজার ৩৫০ ও মনপুরায় ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি রয়েছে।
আর গত বছর আমন আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। যা চলতি বছরে ২০৫ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মনোতোশ সিকদার বলেন, ভোলা দ্বীপ জেলা হওয়াতে এখানে একটু দেরিতে ফসল ফলানো হয়। তাই এবছর বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষকরা বিলম্ব করে বীজতলা তৈরি করেছে। আগষ্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখানে আমন আবাদ কার্যক্রম শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ দিক পর্যন্ত চলেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সারিবদ্ধ চারা রোপণ, সুসম মাত্রায় সার প্রয়োগসহ সব ধরনের পরামর্শ সেবা প্রদাণ অব্যাহত আছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার বলেন, এ মুহূর্তে মাঠে আমনের চারার অবস্থা বেশ ভালো রয়েছে। কারণ গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে ইউরিয়া সারের অভাব দূর হয়েছে। এখানে সাধারণত ব্রিধান-৫১, ৫২, ৭৬, ৭৭, বিআর ২২, ২৩ ও স্বর্ণা জাতের আমন বেশি আবাদ করা হয়। এছাড়া এবছর ২১০টি আমনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের কৃষক কামরুল সর্দার, জাফর হোসেন, শিরো মিয়া ও মোস্তাফিজ বলেন,
তারা প্রত্যেকে এক একর করে জমিতে আমন আবাদ করছেন। ইতোমধ্যে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে তাদের। কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ সেবা পাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত কোন রোগের লক্ষণ নেই বলে জানান তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আমনের ক্ষেতে সাধারণত মাজরা পোকা ও শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে পার্চিং ব্যবস্থা ও আলোক ফাঁদ বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমি পাচিং এর আওতায় আনা হয়েছে এবং ১ হাজার ৯০টি আলোক ফাঁদ বসানো হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এ জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।