যশোরে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে ১শ টাকার ডাব ৬০ টাকায় বিক্রি
যশোর প্রতিনিধি ||
সূর্যের প্রখর দাবদাহ থেকে বাঁচার সেরা উপায় ডাবের জল। উপকার হাজার। কিন্তু বর্তমানে সাধারণ মানুষ ডাবে ছুঁয়ে দেখতেই ভয় পাচ্ছেন। কারণ চড়া দাম। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডাবের মূল্যও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডাব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে রোজাদার, পথচারী এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনরাও।
যেখানে সফট ড্রিংকস বা ফুটপাতের এক গ্লাস ঠান্ডা শরবতের দাম ২০ টাকার বেশি হয় না, সেখানে রমজান মাসে একটি ডাবের দাম এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এমন দাবদাহ পরিস্থিতে ডাবের পানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।
এ সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে যশোরে পথে পথে ঘুরে অর্ধেক মূল্যে ডাব বিক্রি করেছ সামাজিক সচেতন সংস্থা (সাসস) নামের একটি সংগঠন। “ব্যক্তির কাছে বিক্রয়, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কাছে নয়, দৈনিক একজন ব্যক্তি দুইটির বেশী ডাব নয়” এ স্লোগানে রমাজনের শেষ দশকে রোজাদারদের জন্য তাদের এই কর্মসূচী শহরব্যাপী অব্যাহত থাকবে।
রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকালে আছরের নামাযের পর যশোর শহরের চুয়াডাঙ্গা বাস্ট্যান্ড মোড়ে ডাব বিক্রি করতে দেখা যায় সংগঠনের সদস্যদের। উদ্যোক্তারা জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে ডাবের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি করেছে। তাদের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে ১০০ টাকার ডাব ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা। তাদের ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান থেকে ডাব কিনছেন, রোজাদার রিকশাচালক থেকে শুরু করে চাকুরীজিবী ও বয়স্করা।
খোরশেদ আলম নামের এক চাকুরিজীবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অফিস সেরে বাসায় যাচ্ছিলাম। পথে ব্যাতিক্রমী ডাব বিক্রি চোখে পড়লো, মোটরসাইকেল থামিয়ে দেখলাম প্রতি পিচ ডাব বিক্রি করছে ৬০ টাকা দরে। এর ঠিক পাশেই অন্য ব্যবসায়ীরা ডাব বিক্রি করছেন ১০০ টাকা করে। ৬০ টাকা দরে ১২০ টাকা দিয়ে দুরি ডাব কিনেছি, ইফতারিতে খাবো।’
আফসা বেগম নামে এক পথচারী বলেন, ‘আমার বাসায় ডায়রিয়ার রোগী আছে। ডাক্তার ডাব খাওয়াতে বলেছে। কিন্তু বাজারে ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। ১০০ টাকায় ডাব কেনার সাধ্য নেই। আজ হঠাৎ ৬০ টাকায় ডাব বিক্রির দেখা মিললো, তাই ডাব কিনেছি। বাড়িতে গিয়ে রোগীকে খাওয়াবো।’
আনোয়ার হোসেন নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান মাসে অনান্য দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে, কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটা হয়, রমজান মাসে দাম বৃদ্ধি পায়। অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ডাবও রেহাই পায়নি। তারা ডাবের সিন্ডিকেট করে দ্বিগুণ দামে ডাব বিক্রি করছে। এমন সময়ে সচেতন শিক্ষার্থীদের এমন উদ্দ্যোগ অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য শিক্ষনীয় এবং রোজাদারদের জন্য উত্তম উদ্যোগ।
সামাজিক সচেতন সংস্থা (সাসস) এর পৃষ্ঠপোষক ও যশোর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজাদারদের জন্য সূলভ মূল্যে আজকের এই ডাব বিক্রি কর্মসূচী গ্রহন করেছে সাসস। এখানে আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে, আমি তাদের সাথে কর্মসুচিতে অংশ নিয়েছি। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে দেড় শতাধিক ডাব বিক্রি হয়েছে। রমজান মাসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পন্যের দাম বৃদ্ধি করে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট আমার পরামর্শ থাকবে যে প্রতিনিয়ত বাজারে অভিযান পরিচালনা করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সামাজিক সচেতন সংস্থা (সাসস) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষকে সচেতন করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা ১০০ টাকার ডাব ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এটা মাধ্যমে আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করেছি তেমন নিম্ন আয়ের রোজাদার মানুষের নাগালে সূলভ মূল্যে ডাব পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছি। আমাদের এ কার্যক্রম রমাজনের শেষ দশক ধরে চলমান থাকবে।