বেক্সিমকো কোম্পানীর মামলায়
হারুন অর রশিদ প্রধান গ্রেফতার
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্মসাত করার মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তেঁতুলিয়ার স্থানীয় আ’লীগ নেতা হারুন অর রশিদ প্রধান (৫৫)।
তিনি এলাকায় হারুন প্রধান হিসেবে বেশি পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার রাতে (২৩ মার্চ) তেঁতুলিয়ার দেবনগর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন ডিবি পুলিশ।
জানা যায়, গত বছর ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে ধানমন্ডি থানা ঢাকায় ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় পেনাল কোড আইনে মামলাটি করেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর ডিপুটি ম্যানেজার আল
মামুন। এ মামলায় বাবর মিয়া (৬০) কে প্রধান করে ১১জনকে আসামী করা হয়। এ মামলার দ্বিতীয় আসামী হারুন অর রশিদ। তিনি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউপির সাতমেরা এলাকার মৃত.গফুর উদ্দিন প্রধানের ছেলে। বাবর মিয়া গাজীপুর কালিয়াকৈরের শ্রীফলতলীর বাসিন্দা মোখলেস উদ্দিনের ছেলে।
মামলার পর থেকে হারুন প্রধানসহ অনেকে ছিলেন আত্মগোপনে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর হারুণ প্রধানকে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকালে বাবর মিয়া ও হারুন অর রশিদ প্রধান ঢাকায় বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীকে ১৫০ একর জমি ক্রয় করে প্রতিশ্রতি দিয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা গ্রহণ
করেন। তার মধ্যে মামলায় সঙ্গীয় আসামীদের নিয়ে বিভিন্ন পরিমাণে মোট ১১৫ একর ২৪ শতক জমি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া জমির মালিক দেখিয়ে নামে বেনামে কাগজপত্র তৈরি করে বেক্সিমকো হোল্ডিং লিমিটেড, বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী
লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেড ঢাকা হতে জমি ক্রয় বাবদ চাহিদা অনুযায়ী ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
উক্ত জমি করতোয়া সোলার লিমিটেড কোম্পানীর পরিচালক/প্রতিনিধি ওসমান কায়সার চৌধুরী ও ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের ১১১টি ভুয়া পাওয়ার অ্যাটর্নি ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের নামে ৩১টি ভুয়া সাব-কাবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে
বাস্তবে মাত্র ১৬ একর জমি কোম্পানীকে বুঝিয়ে দেয়। প্রতারণামূলকভাবে আসামীরা তাদের নামে-বেনামে ও তাদের সৃজিত বিভিন্ন কোম্পানী ও ফার্মের নামে তারা ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে হারুন প্রধানকে আটকের খবরে ওই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতা মুক্তারুল হক মুকু বলেন, হারুন প্রধান একজন ভূমিদস্যু। তার অত্যাচারে স্থানীরাও রেহাই পায়নি। সে গ্রেফতার হওয়ার পর আমার পৈত্রিক সম্পত্তি গতকাল শুক্রবার উদ্ধার করেছি।
সে কোম্পানির জন্য জমি কিনে দেয়ার নাম করে বেক্সিমকো কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। তার গ্রেফতারের খবর জানতে পেরেই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছি।
মামলার বাদী ঢাকা থেকে মুঠোফোনে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর ডিপুটি ম্যানেজার আল মামুন জানান, আমরা বেক্সিমকো কোম্পানী কর্তৃক জমি ক্রয়ের জন্য যাদেরকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া মালিকানা
দেখিয়ে কাগজপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করায় তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলা করেছি। সে মামলায় গত বৃহস্পতিবার একজনকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে পদ্মা পাওয়ার সোলার কোম্পানীর প্রকৌশলী তামজিদুল কাইয়ুম নাফিস জানান, একই এলাকায় পদ্মা পাওয়ার সোলার কোম্পানীর সাথে এই প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা দুইশো একর জমি কেনার জন্য টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র ২৭ একর জমি বুঝে পেয়েছি।
শর্ত অনুযায়ী দুইশো একর জমি যদি তারা বুঝিয়ে না দিতে পারেন তাহলে স্থানীয় ও ব্যক্তিগতভাবে একাধিক মামলার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এতে দুই কোম্পানী মিলে একশো কোটি টাকা প্রতারণা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আটককৃত হারুণ অর রশিদ প্রধানের ভাতিজা অঙ্কুর প্রধানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলে ফোনটি কেটে দেন।
শনিবার দুপুরে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, মামলাটি ঢাকার ধানমন্ডী থানায় হয়েছে। হারুণ অর রশিদ প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট ছিল। তাকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দেবনগর এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।