চাঁপাইনবাবগঞ্জে সিনেমায় নয়, বাস্তবেই অমিত হাসান বন্দী খাঁচায়
সোহেল রানা রাজশাহী,বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান:
চলচ্চিত্রে নয়, কোন কাল্পনিক চরিত্রও নয়, এবার বাস্তবেই বাঁশের খাঁচায় বন্দী হয়েছে যুবক অমিত হাসান। চিকিৎসা পত্রে লিখিত ঔষধের জন্য সপ্তাহে যার প্রয়োজন হয় আড়াই হাজার টাকা। আর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ না থাকায় দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে সেই টাকা জোগাড় করাও সম্ভব হচ্ছেনা। তাই বুকের ধন মানসিক ভারসাম্যহীন ২৩ বছরের ছেলেকে বাঁশের খাঁচায় বন্দি করে রেখেছেন মা বাবা।
বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের রানিবাড়ি-চাঁনপুর ঘোনটোলা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক মো. রইসুদ্দিন ও মোসা. পিয়ারা বেগমের ছেলে অমিত হাসানের মানবেতর জীবন যাপনের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রইসুদ্দিন ও পিয়ারা বেগমের ঘর আলো করে পৃথিবীর আলো দেখে চার সন্তান। কিন্তু তাদের মধ্যে বড় ও সেজো ছেলে বাদে বাকি দুই ছেলে অর্থাৎ মেজ ছেলে অমিত হাসান (২৩) ও ছোট ছেলে তামিম হাসান (১৭) দুই জনই মানসিক ভারসাম্যহীন। এদের মধ্যে ছোট ছেলে তামিমকে বাইরে রাখলেও মেজ ছেলে অমিতকে রাখতে হয় খাঁচাবন্দি।
কিন্তু কেন তাদের এইভাবে রাখা হয় ? এমন প্রশ্নের জবাবে রইসুদ্দিন বলেন, জন্মের পর থেকেই আমার মেজো ও ছোট ছেলে কেমন যেন প্রতিবন্ধীদের মতো আচরণ করে। ভেবেছিলাম বড় হতে থাকলে বয়সের সাথে সাথে তারা ভালো হয়ে যাবে। আর তাই তাদের সুস্থতার জন্য চিকিৎসা করাতে থাকি।
কিন্তু চিকিৎসা খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ মাসে ১০ হাজার টাকা হওয়ায় আমার মতো দিন আনি দিন খাওয়া লোকের পক্ষে অমিতের ওষুধের জন্য টাকার যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আর ঔষধ দিতে না পারায় দিনে দিনে অমিতের আচরনে পরিবর্তন আসতে থাকে। বাড়ির বাইরে গেলেই মানুষজনকে খামচে দেয়, মারধর করে। এজন্য তাকে বাঁশের খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এদিকে মা পিয়ারা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, নিয়মিত ওষুধ সেবনে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করে না অমিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা সপ্তাহে ২৫০০ টাকা কোথায় পাবো। তাই বাধ্য হয়েই খাঁচাবন্দি করে রাখতে হচ্ছে। তার থাকা, খাওয়া, ঘুম সবই বাঁশের খাঁচার মধ্যে। যেন কলিজার টুকরা সন্তান নয় কোন ছাগল গরু পুষছি আমরা। আমাদের সংসারই চলে গ্রামবাসীর সহায়তায়। আর তাই টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল বলেন, রইসুদ্দিনের ছোট ছেলে তামিম ও মেজ ছেলে অমিত দুইজনই মানসিক বিপর্যস্ত। তবে তামিমের চেয়ে মেজ ছেলে অমিত একটু বেশি পাগল প্রকৃতির। আর তাই তাকে বাঁশের খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। কারণ বাইরে বের হলেই সে মানুষকে মারধর করে, খাঁমচানোর চেষ্টা করে।
তিনি আরও বলেন, এত বড় একটা ছেলেকে বাসের খাঁচায় বন্দি করে রাখা অনেক কষ্টের। যেমন কষ্ট পাচ্ছে তার বাবা-মা, তেমন এটা দেখে কষ্ট লাগে গ্রামবাসীরও।
এ বিষয়ে চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রইসুদ্দিনের পরিবারটি সত্যিই খুব অসহায়। তাদের জায়গা জমি তেমন কিছুই নেই। এদিকে কাঁধে পড়েছে দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের ভার। এতে তারা এখন নিঃস্ব। তবে আমরা গ্রামবাসী তাদের সাথে সব সময় ছিলাম, আছি। আগামীতেও থাকবো। তবে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। খুব দ্রুত রইসুদ্দিনের বাসায় গিয়ে সহায়তা করা হবে। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।