সিরাজুল ইসলাম রতন, স্টাফ রিপোর্টার;
সেই ৭০, ৮০, ৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পার করেছে সোনালী অতীত।মাত্র চল্লিশ বছর ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র তৈরী দেশ বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প।
এমনকি ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রনাঙ্গনের যোদ্ধাদের সাহস ও প্রেরনা জুগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্প।কিন্তু দুঃখ জনক হলে ও সত্য দর্শক শুন্যতা, অশ্লীলতা প্রযুক্তির কল্যানে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্প ও সিনেমা হল গুলো।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় গাইবান্ধার জেলার ৭ টি উপজেলা বড় বড় হাট-বাজারে গুলোতে এক সময় জমজমাট ছিলো সিনেমা হল গুলো।
সিনেমা বা চলচিত্র তখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় সিনেমা হলগুলোতে দর্শক সংখ্যাও ছিল অনেক অনেক বেশী। চাহিদা মত টিকেট না পেয়ে টিকেট ব্লাকিং ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
প্রতিটি হলে দুপুর ১২ টা বেলা ৩ টা সন্ধা ৬ টা ও রাত ৯ টা মোট চার শো সিনেমা প্রদর্শনী করা হতো।প্রতিটি প্রদর্শনীতে নারী ও পুরুষ দর্শকে পরিপূর্ণ থাকতো সিনেমা হল গুলো।
বিনোদনের একমাত্র কেন্দ্রবৃন্দ হওয়ায় অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে আসতো সিনেমা দেখতে।কিন্ত চলচিত্রের সেই সোনালী অতীত আর নেই! স দর্শক শূন্যতায় বন্ধ হয়ে গেছে ৯৯% শতাংশ সিনেমা হল।
বন্ধ সিনেমা হলগুলো ভেঙ্গে ফেলে সেখানে তৈরী করা হয়েছে বিলাস বহুল আধুনিক সব বিপনী বিতান।এতে করে সিনেমা হলে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারি বেকারগ্রস্থ হয়ে পরে। জীবন যাপনের তাগিদে অন্য পেশাকে তারা বেছে নিয়েছেন ।
গাইবান্ধা জেলা সদরের দুটি প্রাচীন সিনেমা হল মায়া ও চৌধুরী ভেঙ্গে সেখানে বিলাস বহুল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।
সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া চৌধুরী সিনেমা হলের সামনে অবস্থান করা জনৈক্য ব্যাক্তি বলেন সিনেমা হল বন্ধের অন্যতম কারণ হলো দর্শক চাহিদা পূরণ করার মতো ভালো মানের সিনেমা তৈরী হচ্ছে না।পাশাপাশি দেশী বিদেশী টিভি চ্যানেল, গুগল ইউটিউব গুলোতে প্রতিদিন, একাধিক উন্নতমানের নতুন পুরাতন ছবি ঘরে বসেই দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন ইউটিউব, ইন্টারনেট থেকে সহজেই পছন্দ মতো সিনেমা নিজের মোবাইলে ডাউনলোডে দেখা যায়। এসব কারণেই সিনেমা হলে দর্শক আসে না।
আর দর্শক চাহিদা না থাকায় অর্থ ব্যয় করে ভালো সিনেমাও বানাচ্ছে না পরিচালকরা। এ কারণেই সিনেমা ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে সিনেমা হল মালিকরা।
পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের ৩ টি সিনেমা হলের মধ্যে ববি,সাথী ও সীমান্ত অন্যতম কিন্তু তিনটি সিনেমা হল এখন বন্ধ রয়েছে।
তথ্যসুত্রে জানাযায় গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলায় মোট সিনেমা হল ছিল ৩৪ টি। এরমধ্যে জেলা শহরেই ছিল ৩টি সিনেমা হল। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে ছিল ৩টি, মহিমাগঞ্জে ৩টি,পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে ৩ টি কোমরপুর হাটে ১ টি, ঢোলভাংগা বাজারে ১ টি,সাদুল্যাপুর সদরে ১টি, ধাপেরহাটে ২টি ও
নলডাঙ্গায় ২টি, সুন্দরগঞ্জ সদরে ২টি, বামনডাঙ্গায় ২টি, সাঘাটা সদরে ২টি ও বোনারপাড়ায় ২টি, ফুলছড়ি সদরে ২টি, কালিরবাজারে ১টি ও জুমারবাড়িতে ১টি। এছাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালীতে ১টি ও দারিয়াপুরে ইতোপূর্বে ছিল ২টি সিনেমা হল।
গাইবান্ধা তাজ সিনেমা হলের সামনে নিরিবিলি হেয়ার কাটিং এর মালিক নরসুন্দর শুকুমার জানান গাইবান্ধায় ৩৫ টি সিনেমা হলের মধ্যো শুধু মাত্র ১ টি সিনেমা হল চালু রয়েছে। আর সেটা হলো তাজ সিনেমা হল।প্রতিদিন তিনটি শো এখানে দেখানো হয়।
গাইবান্ধা সদরের পুর্বপাড়া বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫)জানান আগে সিনেমা দেখতাম,রুপবান, আনার কলি,বেদের মেয়ে জোসনা,আব্দুলঢ়া, এখন আর সেই সিনেমা নেই।যার ফলে সিনেমা হলে যাওয়া হয় না।
সচেতন মহলের দাবী,অশ্লীলতা ও বিদেশি চ্যানেল গুলো বন্ধের পাশাপাশি ব্যবসা সফল সামাজিক সিনেমা তৈরী করলে আবারো আগের মতই দর্শক জনপ্রিয় হয়ে ওঠবে সিনেমা হল গুলো।