এক ঘন্টার জন্য সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিলেন হুমায়রা তানহা
সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি ;
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ভোলায় এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জন এর দায়িত্ব নিলেন ভোলা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুমায়রা তানহা। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ভোলার সিভিল সার্জন হিসাবে তিনি এই প্রতীকী দায়িত্ব পালন করেন। এসময় ভোলার সিভিল সার্জন ডা: কেএম শফিকুজ্জামান প্রতীকী দায়িত্ব হিসাবে সম্পর্কে ধারণা দেন। এসময় হুমায়রা তানহাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের পাশের চেয়ারে বসতে দেন সিভিল সার্জেন। দায়িত্ব পেয়ে অনুপ্রাণিত দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তানহা। ভবিষ্যতের লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির আওতায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) সহযোগিতায় ইয়েস বাংলাদেশ ও ইয়ুথ ফর চেঞ্জ-এর আয়োজনে ‘গার্লস টেকওভার’ শীর্ষক কর্মসূচিতে কন্যা শিশু যুব নারীকে নেতৃত্ব উদ্বুদ্ধকরণ মেয়েদের আত্মবিশ্বাস তৈরীর সুযোগ বৃদ্ধির কর্মসূচীর আওতায় এক ঘন্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালন করা হয়।
প্রতীকী সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়ে হুমায়ারা তানহা বলেন, আজ ভোলার সিভিল সার্জনের প্রতীকী দায়িত্ব পালন করতে পেরে অসাধারণ ভালো লাগছে। আজকের এই দিনটি জন্য আমি অনেক অপেক্ষায় ছিলাম। আজকের এই দিনটির জন্য গত ৫দিন যাবৎ আমি এই পেশা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আজ যখন আমি এই আসনটিতে বসেছি তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আমি এবং আমার মতো কিশোর কিশোরীরা এমন পর্যায় পৌঁচ্ছাতে পারবে। আমি স্বপ্ন দেখছি যে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ভবিষ্যতে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, অনুপ্রেরণাও উৎসাহ পাবে নিজেদের স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য যেমন আজকে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি এক ঘন্টা সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। এ সময় তিনি ভোলার স্বাস্থ্য সেবা মান উন্নয়নের জন্য একাধিক সুপারিশ করেন, যার মধ্যে অন্যতম ভোলায় একটি শিশু হাসপাতাল তৈরি, পাশাপাশি ভোলার ২২ লাখ জনসংখ্যা জন্য একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার পাশাপাশি জেলার হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্সসহ জনবল বৃদ্ধির সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ কিশোর-কিশোরী। এই মোট কিশোর-কিশোরীর ৪৮ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৩ শতাংশ কিশোর। কিন্তু এই কিশোর কিশোরীদের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্যা কেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে সেবা নেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থার সেবার মানবৃদ্ধি করার কথা বলেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম শফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী, ডাঃ নারী, সিভিল সার্জন নারী, নার্স নারী। সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক গ্রামে বা দ্বীপ অঞ্চলের নারী ও কিশোরীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী হুমায়ারা তানহা ওই কিশোরীদের আইকন হিসেবে পরিচিতি পাবে। তাকে দেখেই শিশু ও কিশোরী মুক্তমনা হিসেবে বেড়ে উঠবে। এবং দেশের সর্বোচ্চ পদগুলো অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়া সাহস যোগাবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, তানহা আজ যেই সুপারিশ করেছে তা ভোলার স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ভোলা সিভিল সার্জন অফিস মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ ফাহমিদ খান, ভোলা সদর হাসপাতাল সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা বেগম, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স্ টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর ভলেন্টিয়ার রিমা আক্তার শিমু, মোঃ শাফায়েত হোসেন সিয়ামসহ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক ও এনসিটিএফ বাংলাদেশ এর ভোলা জেলা কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ।
হুমায়রা তানহা ভোলা সরকারি দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভোলা পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ড কালিবাড়ি রোড এলাকার মো: হুমায়ুন কবিরের কন্যা। তানহা ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) ভোলা জেলা কমিটির সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন । শিশু কিশোরদের প্রতীকী দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি হবে বলে মনে করেন, জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।